দেব দর্শনের ছাড়পত্র কই, উষ্মা তৃণমূলেই

শালবনির আর্তি, ‘‘আর পঞ্চাশটা বাড়িয়ে দিন দাদা! নয়তো মারা পড়ব।’’ কেশপুরের সুর চড়া, “দেব আমাদের ঘরের ছেলে। আমাদের তো একটু বেশি দিতেই হবে।” অভিমানে ঠোঁট ফোলাচ্ছে ঝাড়গ্রাম, “জানতাম, আমরাই শেষে বাদ পড়ব!” তারকা প্রার্থী দেবের কর্মিসভায় অবাঞ্ছিত ভিড় ঠেকাতে প্রবেশপত্রের বন্দোবস্ত করেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব স্বস্তিতে নেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

মেদিনীপুরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মিসভার প্রস্তুতি। সোমবার রাতে সৌমেশ্বর মণ্ডলের ছবি।

শালবনির আর্তি, ‘‘আর পঞ্চাশটা বাড়িয়ে দিন দাদা! নয়তো মারা পড়ব।’’

Advertisement

কেশপুরের সুর চড়া, “দেব আমাদের ঘরের ছেলে। আমাদের তো একটু বেশি দিতেই হবে।”

অভিমানে ঠোঁট ফোলাচ্ছে ঝাড়গ্রাম, “জানতাম, আমরাই শেষে বাদ পড়ব!”

Advertisement

তারকা প্রার্থী দেবের কর্মিসভায় অবাঞ্ছিত ভিড় ঠেকাতে প্রবেশপত্রের বন্দোবস্ত করেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব স্বস্তিতে নেই। প্রতি ব্লকের নেতারা আরও বেশি সংখ্যক প্রবেশপত্র চেয়ে দরবার করছেন। আর্জি একটাই দেবদর্শনের বন্দোবস্ত করে দিতে হবে।

ঘাটালে দীপক অধিকারী অর্থাৎ দেব, মেদিনীপুরে সন্ধ্যা রায় এবং ঝাড়গ্রামে উমা সরেন জেলার তিন লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে আজ, মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভার আয়োজন হয়েছে। রবিবার রাতে সেই সভার প্রবেশপত্র নিতে মেদিনীপুর ফেডারেশন হলে হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন ব্লকের নেতারা। তখনই মালুম হয়, চাহিদা আকাশছোঁয়া। জেলায় ২৯টি ব্লক, ৮টি পুরসভা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, ব্লকপিছু তিনশো ও পুর-এলাকাপিছু দু’শো প্রবেশপত্র বিলি করা হবে। পরে অবস্থা বুঝে হাজার পাঁচেক প্রবেশপত্র বেশি ছাপিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্ব।

কিন্তু ১৫ হাজারেও তো কুলোনো যাচ্ছে না!

পরিস্থিতি দেখে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের কর্মীদের অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সভায় না-ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রার্থী চিকিৎসক উমাদেবী সভায় থাকবেন। আর থাকবেন ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকার নেতারা। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “ঝাড়গ্রাম লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকার কর্মীদের নিয়ে পরে সভা হবে।”

স্বভাবতই হতাশ জঙ্গলমহলের কর্মীরা। লালগড়ের ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তন্ময় রায়ের কথায়, “জেলা নেতৃত্ব আশ্বাস দিয়েছেন, কুড়িটি প্রবেশপত্রের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু চাহিদা তো কয়েকশোর! জানি না কী হবে!” দলীয় সূত্রের অবশ্য খবর, ঝাড়গ্রামের কর্মীদের ছেঁটে ফেলেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। যা হিসেব দাঁড়াচ্ছে, তাতে বুথপিছু দু’জন তৃণমূল কর্মী মেদিনীপুরের সভায় আসতে পারবেন। অথচ তৃণমূলের বুথ কমিটিতে সদস্য ২০ থেকে ২৫ জন।

অর্থাৎ, অনেকের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়ছে না। শুধু দেবের দেখা পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার জন্য নয়। জেলার সদর শহরে এত বড় মাপের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হাজির থাকতে পারবেন না জেনেও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ ক্ষুব্ধ। ঘাটাল কেন্দ্রের অন্তর্গত খড়ারের উপ-পুরপ্রধান অরূপ রায় যেমন প্রবেশপত্র না-পাওয়ায় রীতিমতো চটে গিয়েছেন। “শুধু উপ-পুরপ্রধান নই, আমি ব্লকের সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য। অথচ পাস পাইনি! অনেক ওয়ার্ডের সম্পাদক, সভাপতিরাও সভার কথা জানেন না!” আক্ষেপ অরূপবাবুর। খড়ারের পুরপ্রধান উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “কুড়িটা কার্ড পেয়েছি। বিলিও শুরু হয়ে গিয়েছে।”

পাশের জেলাতেও হিড়িক কিছু কম নয়। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা বিধানসভা কেন্দ্রটি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায়। পাঁশকুড়া (পশ্চিম) বিধানসভা আবার রয়েছে ঘাটালের মধ্যে। প্রবেশপত্র নিতে মেদিনীপুরে এসেছিলেন পাঁশকুড়া কলেজের টিএমসিপি নেতা শুভেন্দু ভক্তা। জানালেন, “দেবকে নিয়ে উন্মাদনার অন্ত নেই। অনেকেই মঙ্গলবার মেদিনীপুরে আসতে চায়।”

শেষ কবে কোনও কর্মিসভা ঘিরে এমন উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না জেলা তৃণমূলের প্রবীণ নেতারাও। জেলা তৃণমূলের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের মন্তব্য, “দেবকে কাছ থেকে দেখতেই যত উন্মাদনা। আমরা বোঝাচ্ছি, নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা আর প্রকাশ্য সভা এক নয়। কিন্তু বুঝছে ক’জন!” যে সব কর্মী সভায় আসতে পারবেন না, তাঁদের ক্ষোভ সামলানোর কৌশল নিয়েও ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন নেতারা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের যুব তৃণমূল নেতা মহম্মদ আকবর খানের দাওয়াই, “যারা যেতে পারবে না, তাদের বলব উচ্চ মাধ্যমিকের মধ্যে সভা হচ্ছে। সুষ্ঠু ভাবে সব করতে হলে এটুকু মানতেই হবে।”

আজ উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা রয়েছে। তাই স্টেডিয়ামে সভা হলেও মাঠের খোলা অংশ চট দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা হয়েছে। মাইকও থাকছে না। শুধু সিঙ্গল স্পিকারের কিছু বক্স থাকবে গ্যালারিতে। আঁটোসাঁটো পুলিশি নিরাপত্তাও থাকছে। তোড়জোড় খতিয়ে দেখতে সোমবার বিকেলে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। এ দিন সকাল থেকেই স্টেডিয়ামে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়।

“প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এ বার সব ভালয় ভালয় মিটলে হয়!”রাতে স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় বলে গেলেন দীনেনবাবু।

(সহ প্রতিবেদন: বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, কিংশুক গুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন