বিজেপি কর্মীদের ধরপাকড়, মিলল না সভার অনুমতি

বেশ কিছু দিন আগেই মেদিনীপুরে সভা করার কথা ঘোষণা করেছে বিজেপি। আজ, বুধবার শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সেই সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ সেখানে সভা করার অনুমতি দেয়নি। ফলে, শেষ মুহূর্তে সভাস্থল পরিবর্তন করা হচ্ছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের আজকের সভার আগে বিভিন্ন মামলায় দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এক তৃণমূল কর্মীর স্ত্রীকে রিভলবার ঠেকিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতোকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৮
Share:

বেশ কিছু দিন আগেই মেদিনীপুরে সভা করার কথা ঘোষণা করেছে বিজেপি। আজ, বুধবার শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সেই সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ সেখানে সভা করার অনুমতি দেয়নি। ফলে, শেষ মুহূর্তে সভাস্থল পরিবর্তন করা হচ্ছে।

Advertisement

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের আজকের সভার আগে বিভিন্ন মামলায় দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এক তৃণমূল কর্মীর স্ত্রীকে রিভলবার ঠেকিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতোকে। সোমবার বিকেলে বেলিয়াবেড়ার ভালুকখুলিয়া গ্রামে তৃণমূলের কর্মী-বৈঠক চলাকালীন হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ১৩ জন বিজেপি কর্মীকে ওই রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিজেপির অভিযোগ, তাদের সভা ভন্ডুল করতে শাসক তৃণমূলের চাপে পুলিশ এ সব করছে। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, “জেলায় কি জরুরি অবস্থা চলছে! পুলিশ বলছে, গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সভা করা যাবে না। অন্য সব দল করছে। তাহলে বিজেপি করবে না কেন?” তুষারবাবুর অভিযোগ, “আসলে বিজেপিকে কোনও কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না। তাই যত আক্রমণ বিজেপির উপর নেমে আসছে। তবে এ ভাবে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।”

Advertisement

সভার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের জবাব, “শহরের এই এলাকায় রাস্তা ঘিরে সভা করলে যানজটের সৃষ্টি হবে। একশো-দেড়শো লোককে নিয়ে ছোট সভা করা, আর ৩০ হাজার লোককে নিয়ে একটা বড় সভা করা এক ব্যাপার নয়।” পুলিশ সুপারের আরও দাবি, বিজেপির পক্ষ থেকে সভার অনুমতি চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছিল, সেখানে কখন সভা হবে, কত লোক আসতে পারে, তার কিছুই উল্লেখ ছিল না।

পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে চলতি মাসের গোড়ায় থানায়-থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি সংগঠিত করেছিল বিজেপি। তারপরই শহরে সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজেপি-র জেলা নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন, সভা হবে শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবু জানান, সভার অনুমতি চেয়ে দলের পক্ষ থেকে ২০ অগস্ট কোতয়ালি থানায় যাওয়া হয়েছিল। সোমবার রাতে পুলিশ সুপার জানান, গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সভা করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। পরে বিজেপি অরবিন্দনগরের মাঠে সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশ সেখানেও অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। বিজেপি সূত্রে খবর, এই অবস্থায় সেখপুরার মাঠে আজকের সভা হতে পারে।

অরবিন্দনগরের মাঠে সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি কেন? পুলিশ সুপারের জবাব, “এই মাঠ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। কোর্টের একটি রায়ও রয়েছে। জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। এই মাঠে সভা করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। স্টেডিয়াম বা অন্য কোনও মাঠে সভা করতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গেই অনুমতি দেওয়া হবে।”

জঙ্গলমহলে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ও চলছে। গত ২২ অগস্ট বেলিয়াবেড়ার বাহারুনা গ্রামে বিজেপি বেআইনি ভাবে সশস্ত্র সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছে, এই অভিযোগে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল দলের চার কর্মীকে। ওই দিনই বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো বাহারুনা গ্রামের এক তৃণমূল কর্মীর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। ওই তৃণমূল কর্মীকে বিজেপির মিছিলে হাঁটার জন্য হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। ২৩ অগস্ট ওই তৃণমূল কর্মীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শ্লীলতাহানির ও অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে পুলিশ। তার ভিত্তিতে এ দিন সঞ্জিতবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে ঢোকার সময় সঞ্জিতবাবু সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করেন, “পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ সুপার তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন।”

এ দিন আদালতে দাখিল করা ফরোয়ার্ডিং রিপোর্টে মামলার তদন্তকারী অফিসার দাবি করেন, সঞ্জিতবাবু সর্বক্ষণ বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। সরকারি কৌঁসুলি কণিষ্ক বসু বলেন, ওই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য ধৃত সঞ্জিতবাবুকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। অভিযুক্তের আইনজীবী তপন সিংহ তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করলেও বিচারক টিকেন্দ্রনারায়ণ প্রধান সঞ্জিতবাবুকে চার দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

সোমবার বিকেলে বেলিয়াবেড়ার ভালুকখুলিয়া গ্রামে তৃণমূলের কর্মী-বৈঠক চলাকালীন হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ১৩ জন বিজেপি কর্মীকে ওই রাতেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বাড়ি বেলিয়াবেড়া থানার বিভিন্ন গ্রামে। ওই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বুদ্ধেশ্বর হেমব্রমের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানি, মোটর বাইকে অগ্নিসংযোগ, বেআইনি জমায়েত করে লুঠপাঠ-ভাঙচুর ও চুরির ধারায় এবং অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে পুলিশ। ধৃতদের মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। সাত জনকে চারদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি ছয় অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার রাতে বেলিয়াবেড়ার ঝরিয়া গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনাতেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস পাল বলেন, “পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। এভাবে চললে জঙ্গলমহল ফের অশান্ত হয়ে উঠলে তার দায় পুলিশ-প্রশাসনের উপরই বর্তাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement