মমতা বিশ্বাস ভেঙেছেন, সরব শমীক

উপ-নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হওয়ার পরে প্রথম মেদিনীপুর সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করলেন বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য। কড়া সমালোচনার সুরে বললেন, “মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাসের সঙ্গে বেইমানি করেছেন মমতা।” শমীকবাবুর মতে, আশি-নব্বইয়ের দশকে মমতার জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেশিয়াড়ি ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩০
Share:

কেশিয়াড়ির সভায় শমীক ভট্টাচার্য। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

উপ-নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হওয়ার পরে প্রথম মেদিনীপুর সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করলেন বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য। কড়া সমালোচনার সুরে বললেন, “মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাসের সঙ্গে বেইমানি করেছেন মমতা।”

Advertisement

শমীকবাবুর মতে, আশি-নব্বইয়ের দশকে মমতার জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। তাঁর আপসহীন বামবিরোধী মনোভাব মানুষকে বোঝাতে পেরেছিল, সিপিএম যেতে পারে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। রাজ্যের একমাত্র বিজেপি বিধায়কের কথায়, “আগে মানুষ ওঁকে ভালবাসতেন, আর আজ ভয় পাচ্ছেন।”

শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন জায়গায় কর্মসূচি ছিল শমীকবাবুর। শুরুতে মেদিনীপুরের রবীন্দ্র নিলয়ে বিজেপির তরফে বসিরহাটের বিধায়ককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তারপর শমীকবাবু কেশিয়াড়ি ও দাসপুরে সভা করেন। লোকসভা ভোটের পরে জেলায় সংগঠন বাড়ানোয় জোর দিয়েছে বিজেপি। দলের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। দলীয় সূত্রে খবর, জেলার যে সব এলাকায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, তার মধ্যে দাসপুর-১, কেশিয়াড়ি ব্লক অন্যতম। সে জন্যই এই দুই এলাকাকে শমীকবাবুর সভার জন্য বাছা হয়। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সাধারণ ভাবে জেলার সর্বত্রই বিভিন্ন দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার একটা প্রবণতা চলছে। দাসপুর, কেশিয়াড়িতেও এই প্রণবতা রয়েছে।”

Advertisement

এ দিন মেদিনীপুরের সংবর্ধনা সভায় তুষারবাবু ছাড়াও ছিলেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাবলু বরম, সোমনাথ সিংহ, দলের শহর সভাপতি অরূপ দাস প্রমুখ। সভায় তৃণমূলের সমালোচনা করে শমীকবাবু বলেন, “লুঠ-সন্ত্রাস ছিলই। এখন সংযোজিত হয়েছে দেশদ্রোহিতা। পশ্চিমবাংলায় যে বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে আরডিএক্স আছে। বারুদের স্তূপের উপর বসে আছে রাজ্য।” তাঁর আরও কটাক্ষ, “পুলিশ বোমা-বিস্ফোরক খুঁজে পেল না! পাবে কী করে? পুলিশ তো বসে বসে পাগলু ড্যান্স দেখছে!”

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তোলেন শমীকবাবু। তাঁর কথায়, “যিনি মা-মাটি-মানুষের কথা বলেন, তিনি মানুষকে ফেস না করে ফেসবুকে উত্তর দিচ্ছেন! আর যে উত্তর দিচ্ছেন, তারও কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। আসলে সত্য ঢাকতে চাইছেন।” তৃণমূলের জামাত-যোগের প্রসঙ্গ তুলে শমীকবাবু বলেন, “কোন চাপে ইমরান হাসানকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কেন রাজ্য সরকার জামাতের সঙ্গে সমঝোতা করতে গেল?” জামাতের বিভিন্ন স্তরের লোকেদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীর যোগাযোগ যাতে উদ্ঘাটন না হয়, রাজ্য সরকার সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও এ দিন কেশিয়াড়ি মোড়ের সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগই করেন শমীকবাবু। সারদা-প্রশ্নেও তৃণমূলকে এ দিন তুলোধনা করেছেন শমীকবাবু। তাঁর কথায়, “তৃণমূল সরকার সারদার সরকার হয়ে গিয়েছে। এতদিন যে শিল্পীরা দিদিমণির (মমতার) ছবিকে শংসাপত্র দিতেন, এখন সেই শুভাপ্রসন্ন বলছেন, ছবির কত দাম বলতে পারব না।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে বিভিন্ন সভা করতে গিয়ে বিজেপিকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলেও এ দিন নালিশ করেন শমীকবাবু। এ দিন কেশপুরের সভায় আসার পথে বিজেপি কর্মীদের ব্লকের বাঘাস্তি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাধা দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।

রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের নামে তামাশা চলছে বলে মত শমীকবাবুর। একই সঙ্গে তাঁর আশা, রাজ্যের মানুষ আগামীকে বিজেপিকে বেছে নেবে। শমীকবাবুর কথায়, “সিপিএম বিধানসভার মধ্যে আছে। কাগজে ওরাই বিরোধী। তবে গলি থেকে রাজপথ, কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার, মানুষ ধরেই নিয়েছেন প্রকৃত বিরোধী দল বিজেপিই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন