কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা ।—নিজস্ব চিত্র
বাড়িতে তিন ভাই বলে গিয়েছিলেন, বৃদ্ধা মা-কে নদিয়ার মায়াপুর ঘুরিয়ে দেখাতে যাচ্ছেন। মায়াপুরের হোটেল থেকেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার হলেন বর্ধমান শহরের পীরবাহারামপুরের নাগ পরিবারের ওই চার জন। আপাতত তাঁরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় কৃষ্ণনগরে শক্তিনগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রের খবর, আচ্ছন্ন অবস্থায় পরিবারটি জানিয়েছে, পরপর কয়েক বছর আইপিএলে ‘বেটিং’ করে দেনার জালে জড়ান তিন ভাই। লাটে ওঠে ডিমের ব্যবসা। সেই পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তাঁরা। তাতে সামিল হন তাঁদের মা-ও।
পুলিশ সূত্রে খবর, ১১ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পরে বর্ধমান সদরের নতুনগঞ্জে পারিবারিক ডিমের ব্যবসা দেখতে শুরু করেন তিন ভাই— হরিদাস নাগ, দেবদাস নাগ ও সৌমেন নাগ। হরিদাসবাবুর স্ত্রী, বাড়ির বড় বউ ঝুমাদেবীর দাবি, মঙ্গলবার চার জন মায়াপুরে রওনা হন। বিকেলে ঝুমাদেবীর মোবাইলে ফোন করেন তাঁর স্বামী হরিদাস। বলা হয়, ‘আমরা চার জন সুইসাইড করছি’। ফের ফোন করে হরিদাসবাবু বলেন, ‘দেনার দায়ে আমরা বিষ খেয়েছি’।
ঝুমাদেবী বুধবার বলেন, ‘‘এমন ফোন পেয়ে যোগাযোগ করি, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সাহাবুদ্দিন খানের সঙ্গে।’’ কাউন্সিলর বর্ধমান থানায় বিষয়টি জানান। বর্ধমান থানা নদিয়া পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রাতে পুলিশ মায়াপুরের একটি হোটেল থেকে গভীর রাতে বছর পঁয়ষট্টির নমিতা নাগ ও তাঁর তিন ছেলেকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে মায়াপুর হাসপাতাল, পরে শক্তিনগরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। শক্তিনগর হাসপাতালের ডাক্তার কৃষ্ণেন্দুশেখর চৌধুরী বলেন, ‘‘কীটনাশকের সঙ্গে ঘুমের ওযুধ খেয়েছেন ওঁরা। অবস্থা আশঙ্কাজনক।’’
আরও পড়ুন: লালুর পর নিশানায় মমতাই
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার রাতে কিছুটা হুঁশ ফেরে মেজ ভাই দেবদাসের। তিনি বলতে থাকেন, পরপর কয়েক বছর ধরে ‘বেটিং’ করতে গিয়ে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা দেনা হয় তিন ভাইয়ের। তার প্রভাব পড়ে ডিমের ব্যবসায়। মহাজনেরা মাল দিতে চাইছিল না। টাকা চাইছিল। বৃহস্পতিবারই তিন মহাজনের টাকা চাইতে আসার কথা ছিল তাঁদের বাড়িতে। টাকার জোগাড় করতে না পেরে ৩০ জুলাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। মায়াপুরে গিয়ে নমিতাদেবীও পরিকল্পনায় সামিল হন।
পীরবাহারামপুরে নাগ পরিবারের দোতলা বাড়ি তালাবন্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পড়শিদের দাবি, নাগ পরিবারের সদস্যদের বেটিংয়ে র ঘটনা তাঁদের জানা। হাসপাতালে দেবদাস বলেন, ‘‘ছ’মাস আগে বেটিং বন্ধ করে দিয়েছি আমরা। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে!’’ দেবদাসদের কাকা কাশীনাথ নাগ বলেন, ‘‘বেটিং কি না জানি না, কিন্তু দেনার দায়ে এমন কাণ্ড ভাবতে খারাপ লাগছে।’’