Panagarh Accident Case

‘রেষারেষি করে না’, মেয়ের গাড়িচালকের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ইভটিজ়িং’ তত্ত্বেই অনড় সুতন্দ্রার মা

তনুশ্রী জানান, সুতন্দ্রা বহু বার ওই গাড়িচালকের সঙ্গেই গয়া গিয়েছেন। আবার নিরাপদে ফিরেও এসেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা হাইওয়েতে নিয়মিত গাড়ি চালায়, তারা কখনও রেষারেষি করে না।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:০২
Share:

(বাঁ দিকে) সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পানাগড়কাণ্ডে ‘ইভটিজ়িং’ হয়নি বলে দাবি করেছিল পুলিশ। মৃত তরুণী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় অবশ্য ‘ইভটিজ়িং’ তত্ত্বেই অনড়। সোমবার তিনি বলেন, “পুলিশ পুলিশের কথা বলছে। আমরা তো বলছি ইভটিজ়িং।” গাড়ি নিয়ে রেষারেষি করার যে দাবি করেছিল পুলিশ, তা-ও খারিজ করে দিয়েছেন তনুশ্রী। মেয়ে সুতন্দ্রার গাড়িচালকের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “যে ড্রাইভার নিয়ে যাচ্ছিল, তার সঙ্গে আমি বহু বার বহু জায়গায় গিয়েছি। সে রেষারেষি করে না। রেষারেষি করার ড্রাইভার নয়।”

Advertisement

তনুশ্রী জানান, সুতন্দ্রা বহু বার ওই গাড়িচালকের সঙ্গেই গয়া গিয়েছেন। আবার নিরাপদে ফিরেও এসেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা হাইওয়েতে নিয়মিত গাড়ি চালায়, তারা কখনও রেষারেষি করে না।” পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সুতন্দ্রার মা। এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হল না কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পানাগড়কাণ্ডে ‘ইভটিজ়িং’-এর অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অভিযোগটি দায়ের করেন সুতন্দ্রার সঙ্গে গাড়িতে থাকা এক জন। এই বিষয়ে তনুশ্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমরা বার বারই বলছি ইভটিজ়িং হয়েছে। যে ছেলেটি অভিযোগ করেছিল, তার সঙ্গে আমার এখনও কথা হয়নি। তাকে আর ড্রাইভারকে কাল পুলিশ আটকে রেখেছিল। তার সঙ্গে কথা হলেই আমি বিষয়টি নিয়ে বলতে পারব।”

Advertisement

রবিবার রাতে গাড়ি নিয়ে চন্দননগর থেকে গয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় (২৬)। অভিযোগ ওঠে, মধ্যরাতে পানাগড়ের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় জাতীয় সড়কের পাশে কাঁকসা থানা এলাকার একটি রাস্তায় কয়েক জন মত্ত যুবক গাড়ি নিয়ে তরুণীর গাড়ির পিছু নেন। তরুণীর গাড়িতে বার বার ধাক্কা দেন তাঁরা। ‘ইভটিজ়ার’দের হাত থেকে বাঁচতেই দ্রুত গতিতে চালাতে গিয়ে উল্টে যায় তরুণীর গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুতন্দ্রার। তাঁর দেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল ময়নাতদন্তের জন্য। তরুণীর নীল রঙের গাড়ি এবং অভিযুক্তদের সাদা গাড়িটি আটক করে পুলিশ। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তরুণীর গাড়িতে থাকা তাঁর দুই সহকর্মীকেও।

ইভটিজ়ার দৌরাত্ম্যের অভিযোগকে ঘিরে যখন চাপানউতর চলছে, সেই সময় আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, পানাগড়কাণ্ডে ‘ইভটিজ়িং’ হয়নি। তরুণীর গাড়িটি ধাওয়া করা হয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও ‘অসত্য’ বলে জানায় পুলিশ। বরং, তরুণীর গাড়িই অন্য গাড়িটিকে ধাওয়া করেছিল বলে জানানো হয়।

সোমবার আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার (সিপি) সুনীল চৌধরি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়ে বলেন, তরুণীর নীল গাড়িটিই সাদা গাড়িটিকে ধাওয়া করছিল। পুলিশ কমিশনার বলেন, “জাতীয় সড়কের পাশের একটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তরুণীর গাড়িটিই সাদা গাড়িটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। সেই সময় সাদা গাড়িটি রাস্তার পাশের একটি গলিতে ঢুকে যায়। তরুণীর গাড়িটিও ওই গলিতে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু ওদের গাড়িটি ঢুকতে পারেনি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি উল্টে যায়। তার ফলেই ওই তরুণীর মৃত্যু। পানাগড়ের ঘটনায় ইভটিজ়িংয়েরও ঘটনা ঘটেনি।’’

অন্য দিকে, মঙ্গলবার এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত রাজ্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, যাতে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায়।’’ সকাল থেকেই চন্দনগরের নাড়ুয়া রায়পাড়ায় সুতন্দ্রার বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসেছে। বেলায় বাড়িতে যান রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যা সুজাতা পাকড়াশি লাহিড়ী। তিনি সুতন্দ্রার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। বাড়িতে যান চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তীও। বিকেলে যেতে পারেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তুলে দুপুরে চন্দননগর বাগবাজার মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement