বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাথে আলাপচারিতায়।—ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য বা সরকারি ব্যবস্থাপনায় অন্তিম শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা হোক, এমনটা চাননি মৃণাল সেন। তাঁর এই শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে তৈরি রাজ্য সরকারও। প্রয়াত চলচ্চিত্রকারের পরিজনেরা যেমন চাইবেন, সব কিছু তেমন ভাবেই হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। পরিবার মনে করলে সরকার সব রকম সহায়তা করতেও তৈরি থাকছে।
মৃণালবাবুর মরদেহ আপাতত রাখা থাকছে তপসিয়ায় কলকাতা পুরসভার পরিচালনাধীন ‘পিস ওয়ার্ল্ড’-এ। শেষকৃত্য হবে তাঁর ছেলে শিকাগো থেকে শহরে ফিরলে। মৃণালবাবুর পারিবারিক চিকিৎসক অধৃষ্য কুমার রবিবার জানিয়েছেন, মরদেহ যাতে সরকারি আয়োজনে রবীন্দ্র সদন বা ‘নন্দনে’র (যার উদ্বোধনে বড় ভূমিকা ছিস মৃণালবাবুরই) শায়িত না থাকে, দেহ যাতে অন্য কোথাও না নিয়ে যাওয়া হয়— এমন ইচ্ছাই ছিল নবতিপর পরিচালকের। মৃণালবাবুর বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন জানিয়ে এসেছেন, ছেলে ফেরার পরে শেষকৃত্যের বিষয়ে পরিবার যা সিদ্ধান্ত নেবে, সে ভাবেই সব হবে। সরকারের কোনও ভূমিকা নেওয়ার থাকলে তারা তা পালন করতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: মানিকদার চোখে থেকে গিয়েছিল মুগ্ধতার রেশ
পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও নাকতলার দ্বিতীয় পল্লিতে সেন পরিবারকে দেখার পুরনো স্মৃতি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘পরিবারের ভাবাবেগকে সর্বাগ্রে মর্যাদা দিতে হবে। তাঁরা যা চাইবেন, তা-ই হবে।’’ একই বক্তব্য সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রেরও। তাঁর কথায়, ‘‘টানাটানির প্রশ্নই নেই। শেষকৃত্যের আগে যদি কোনও সুযোগ থাকে, আমাদের তরফে শ্রদ্ধা জানানো হবে।’’
শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক মৃণাল সেনের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি শ্রী সেনের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’’
নন্দন উদ্বোধনে সত্যজিৎ রায় ও জ্যোতি বসুর সঙ্গে।—ফাইল চিত্র।
জন্মদিনে মৃণালবাবুর জন্য লাল গোলাপ নিয়ে বাড়িতে যেতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জন্মদিনে দু’জনের কথাবার্তা, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য তাঁর ‘মনের অশান্তি, অস্বস্তি’র স্মৃতিচারণ করে এ দিন বুদ্ধবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মৃণালদা’র চলে যাওয়ার খবর আমার কাছে নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুসংবাদ।’’ বুদ্ধবাবুর মতে, ‘‘চলচ্চিত্রে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে সৌন্দর্যময়তার যোগ, এই নিয়ে মৃণাল সেনের ছবির নিজস্ব ভাষা তৈরি হয়েছিল। এখানেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য।’’ সেই সঙ্গেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বিশ্বাসে, জীবনযাপনে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বামপন্থী ছিলেন। বহু বার তাই কলকাতার রাস্তায় তাঁকে পেয়েছি পায়ে পায়ে মানুষের মিছিলে। চলচ্চিত্রকার হিসাবে তাঁর জীবনবীক্ষার শিকড়ে ছিল বামপন্থা।’’
আরও পড়ুন: ‘আমাকে মৃণাল বলবি, মৃণালদা নয়’
বিশ্বাসে বামপন্থী হলেও মৃণালবাবু কখনও কোনও দলের সদস্যপদ নেননি বলে জানিয়ে তাঁর সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্কে’র কথা বলেছেন বিমান বসু, শ্যামল চক্রবর্তীরা। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ অনেকেই।