Muslim

সারথি ‘আম্মা’র হাত ছাড়েননি মানাইরা

হিজলগড়ার কলাইবাড়িপাড়ায় প্রায় দু’শোটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী পরিবারের বাস। তবে গ্রামে হিন্দু পরিবারও রয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:১৫
Share:

সারথিদেবীর দেহ কাঁধে মুসলিম পড়শিরা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

বারো বছর আগে আলুথালু অবস্থায় গ্রামে এসে পড়েছিলেন বৃদ্ধা। এটুকু বলেছিলেন, নাম সারথি বাউড়ি। বাড়ি, পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরে। সম্বলহীন ওই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন গ্রামের শেখ মানাই। পড়শি ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই হয়ে ওঠেন সারথিদেবীর অবলম্বন। মৃত্যুর পরেও বছর ৮০-র বৃদ্ধার পাশে থাকলেন গ্রামের শেখ জোজো, শেখ মানাই, শেখ বাবলুরা। তাঁরাই শনিবার সারথিদেবীর শেষকৃত্য করেছেন। জামুড়িয়ার হিজলগড়ার এই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন হিজলগড়া পঞ্চায়েতের প্রধান লক্ষ্মী মুর্মু, বিডিও কৃশানু রায়েরা।

Advertisement

হিজলগড়ার কলাইবাড়িপাড়ায় প্রায় দু’শোটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী পরিবারের বাস। তবে গ্রামে হিন্দু পরিবারও রয়েছে। পেশায় সিমেন্টের ব্যবসায়ী শেখ মানাই জানান, বারো বছর আগেই খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারথিদেবীর কোনও আত্মীয়-স্বজন নেই। এই পরিস্থিতিতে তাঁর খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করেন গ্রামের বাসিন্দারা। ‘মিষ্টি ব্যবহারের’ জন্য ধীরে-ধীরে ‘আম্মা’ প্রিয় হয়ে ওঠেন গ্রামে।

কাজি জুয়েল, জোজো-সহ পাড়ার বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন সারথিদেবী। বৃহস্পতিবার বাড়াবাড়ি হয়। গ্রামবাসীই তাঁকে সে দিন রানিগঞ্জে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার জানিয়েছিলেন, বৃদ্ধার বাঁচার নেই। শেখ মানাই বলেন, ‘‘আম্মাকে বাড়ি ফিরিয়ে এনে সেবা করি আমরা সবাই। এ দিন সকালে উনি মারা যান।’’শুরু হয় শেষকৃত্যের প্রস্তুতি। জোগাড় করা হয় খোল, করতাল। আনা হয় পুরোহিত। বাঁশের মাচায় চাপিয়ে হিজলগড়া শ্মশানঘাটে নিয়ে গিয়ে দাহ করা হয় সারথিদেবীকে। সে কাজে সহায়তা করেন তৃণমূলের

Advertisement

জামুড়িয়া ২ ব্লক সভাপতি সুকুমার ভট্টাচার্য। ‘সম্প্রীতি’র নজির অবশ্য এই এলাকায় প্রথম নয়। শেখ বাবলু বলেন, ‘‘সম্প্রতি চুরুলিয়ায় এক হিন্দু পড়শির শেষকৃত্য করেন মুসলিমেরা। সেটা জানা ছিল বলে ভাবলাম, আমরা পিছিয়ে থাকব কেন? আমরা ছাড়া, আম্মার তো কেউ ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন