Covid Vaccination

Covid Vaccination: টিকা নেননি? কোমর কষে নামছে সরকার

ছবিটা বেমালুম বদলে গিয়েছে। রাত জেগে লাইন নেই, লাইন থাকলেও সেই উপচে পড়া ভিড় নেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৪০
Share:

রাজ্যে কোভিড টিকা নিয়ে ‘হাহাকারে’ হঠাৎই যেন লাগাম পরেছে। কিন্তু, কেন?

ছবিটা বেমালুম বদলে গিয়েছে। রাত জেগে লাইন নেই, লাইন থাকলেও সেই উপচে পড়া ভিড় নেই। নেই ধস্তধস্তি, বাকবিতণ্ডা। পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়াও বন্ধ। রাজ্যে কোভিড টিকা নিয়ে ‘হাহাকারে’ হঠাৎই যেন লাগাম পরেছে। কিন্তু, কেন? সকলেই কি তা হলে টিকার দুটো ডোজ় পেয়ে গিয়েছেন?

Advertisement

সরকারি তথ্য বলছে, মোটেও তা নয়। বরং এখন টিকার জোগান যথেষ্ট। পরিকাঠামোও মজুত। অথচ টিকা নিতে আগ্রহী নয় আম জনতার একাংশই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ় না-নেওয়ার ছবি উঠে আসছে। আবার একটা ডোজ়ও নেননি, এমন মানুষও রয়েছেন জেলায় জেলায়। পশ্চিম বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মহম্মদ ইউনুস যেমন জানালেন, প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু, জেলার সব টিকাকরণ কেন্দ্র মিলিয়ে ১০-১৫ হাজারের বেশি হচ্ছে না। ঠিক এই কারণেই শুক্রবার জরুরি বৈঠক ডেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করানোর পাশাপাশি ভোটার তালিকা ধরে টিকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করানোর নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
মুর্শিদাবাদেই এখনও প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ করোনার টিকার কোনও ডোজ়ই পাননি বলে জানা যাচ্ছে। নদিয়া জেলাতেও সংখ্যাটা ৯ লক্ষের কাছাকাছি। এই প্রবণতা ঠেকাতে সব জেলা প্রশাসনই নিজেদের মতো করে উদ্যোগী হয়েছে। কোথাও মাঠে নেমে পড়েছেন বিডিও, কোথাও পথে নেমে বা গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন মহকুমাশাসক কিংবা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটরা। বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন আশাকর্মীরাও, টিকাকরণের সচেতনতা বাড়াতে যাঁরা প্রশাসনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। অতিমারি পর্বের সূচনা থেকে নিজের নিজের এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করা এই ‘আশা দিদি’দের টিকা না-পাওয়া বাসিন্দাদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে ইমামদের টিকা-সচেতনতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে বালুরঘাট পুর-এলাকা ছাড়াও জেলার অন্যান্য এলাকাগুলিতে টিকাদান বাড়াতে মাইক প্রচার, ফ্লেক্স টাঙানো, এবং টিকা প্রাপকদের মোবাইলে বাল্ক এসএমএস পাঠানোর কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। কোচবিহারে ব্লক অফিস থেকে তালিকা ধরে ফোন করা হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য। বীরভূমের বোলপুর পুরসভা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা না-নেওয়া লোকেদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে।

Advertisement

বস্তুত, টিকার দ্বিতীয় ডোজ় না-নেওয়াটাই বেশি মাথাব্যথা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের। উত্তর ২৪ পরগনায় যেমন ৭৮ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৬৮ লক্ষ ৩৭ হাজার। অথচ দ্বিতীয় ডোজ় পাওয়া মাত্র ৩২ লক্ষ ৬১ হাজার। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ় নিচ্ছেন না, তাঁদের খুঁজে বের করে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। কারণ, টিকা পর্যাপ্ত আছে।’’ ছবিটা আলাদা নয় পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর বা ঝাড়গ্রামেও। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রথম ডোজ় নেওয়া হয়েছে ৮৪ শতাংশের, দ্বিতীয় ডোজ় স্রেফ ৩৪ শতাংশের। বাঁকুড়ায় ৯৩ শতাংশ বাসিন্দা প্রথম ডোজ় নিলেও, ৩২ শতাংশ নিয়েছেন দ্বিতীয়। পুরুলিয়ায় দ্বিতীয় ডোজ় নিতে না-আসা বাসিন্দাদের ফোন নম্বরের তালিকা এএনএম কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘‘প্রত্যেক বিডিওকে বলা হয়েছে যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ় নেননি, তাঁদের খুঁজে বার করতে হবে। তার পরে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি দল গঠন করে বোঝাতে হবে।’’

কিন্তু, কেন এই অনাগ্রহ?

চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এখনও সমাজে এক শ্রেণির মানুষ কোভিড-টিকা নিয়ে সন্দিহান। কেউ নানা রকম গুজবে কান দিয়ে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার এই টিকায় আস্থা রাখতে পারছেন না। আবার স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, জীবন স্বাভাবিক স্রোতে ফেরায় অনেকেই অন্যত্র কাজের জায়গায় চলে গিয়েছেন। সেটাও টিকা না-নেওয়া বা দ্বিতীয় না-পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন