হেলমেট ছিল না কারও

ছ’ঘণ্টার মধ্যে পথের বলি ৫

ঘটা করে ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ পালন করার পর সপ্তাহ কাটেনি। গোলাপ দিয়ে গাঁধীগিরি, কড়া হাতে জরিমানা— কাজের কাজ যে কিছুতেই হয়নি, তার প্রমাণ মিলল শনিবার রাতে।মাত্র ঘণ্টা ছয়েকের ব্যবধানে পথ দুর্ঘটনা ছিনিয়ে নিল পাঁচ-পাঁচটি তাজা প্রাণ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২৮
Share:

কল্যাণীর ঘটনায় মোটরবাইকে ধাক্কা মারে এই ভ্যানটিই।

ঘটা করে ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ পালন করার পর সপ্তাহ কাটেনি। গোলাপ দিয়ে গাঁধীগিরি, কড়া হাতে জরিমানা— কাজের কাজ যে কিছুতেই হয়নি, তার প্রমাণ মিলল শনিবার রাতে।

Advertisement

মাত্র ঘণ্টা ছয়েকের ব্যবধানে পথ দুর্ঘটনা ছিনিয়ে নিল পাঁচ-পাঁচটি তাজা প্রাণ। কল্যাণী এবং চাকদহের ঘটনা। মৃতদের মধ্যে তিন জন মোটরবাইকের সওয়ারি। মাথায় হেলমেট ছিল না কারোরই। গুরুতর জখম হয়ে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন মোটরবাইকের আরও এক হেলমেটহীন সওয়ারি।

প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে চাকদহের শিমুরালি চৌমাথায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন তিন বন্ধু। সাগর সিংহ (১৮), মিন্টু সরকার (১৯) ছিলেন একটি মোটরবাইকে। সাইকেলে যাচ্ছিলেন তাঁদের বন্ধু বিভাস বিশ্বাস (১৯)। তিন জনেই ওই এলাকারই বাসিন্দা। জাতীয় সড়কে উল্টো দিক থেকে আসছিল একটি পাথর বোঝাই লরি।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাইকের সওয়ারিদের মাথাতে হেলমেট ছিল না। গতি বাড়াতেই বাইকটি সজোরে ধাক্কা মারে বিভাসের সাইকেলে। নিয়ন্ত্রণ হারায় মোটরবাইকটিও। উল্টো দিক থেকে আসা লরির নীচে ঢুকে যান তিন জনই। ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় বিভাসের। গুরুতর জখম অবস্থায় বাকি দু’জনকে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভোরে সেখানেই মৃত্যু হয় সাগরের। পুলিশ লরিটিকে আটক করেছে। পলাতক চালক-খালাসি।

একটু পরেই চাকদহেরই বিষ্ণুপুরে ফের দুর্ঘটনা। মৃত্যু হয় আরও এক ব্যক্তির। এ ক্ষেত্রে ঘাতক একটি মোটরবাইক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত ১০টা নাগাদ চাকদহ-বনগাঁ সড়কে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা শিবু সরকার (৪৭)। একটি দ্রুত গতির মোটরবাইক তাঁকে ধাক্কা মারে। গুরুতর জখম হন তিনি। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

এই দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের দুর্ঘটনা ঘটে চাকদহ লাগোয়া কল্যাণীতে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণীর রথতলার বাসিন্দা অপূর্ব সরকার (১৯) ভোর তিনটে নাগাদ মোটরবাইকে করে হালিশহরের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই মোটরবাইকেই ছিলেন তাঁর বন্ধু সুরজ সোনকার (২০)। সুরজের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরের কাঁচরাপাড়া।

পুলিশ জানিয়েছে, কল্যাণীর বুদ্ধ পার্কে বাইকটি যখন কল্যাণী-ব্যারাকপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার মুখে একটি লঙ্কা বোঝাই পিকআপ ভ্যান মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকআপ ভ্যানটি একটি পুলিশ কিয়স্কে ধাক্কা মারে। জখম হন তার চালক-খালাসি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে জখম চার জনকে জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় অপূর্ব ও সুরজের।

আমজনতা তো বটেই, ঘটনায় স্তম্ভিত পুলিশও। দিন কয়েক আগেই পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে প্রচার চালাচ্ছিল পুলিশ। কখনও ফুল দিয়ে তো কখনও জরিমানা করে। সাড়াও মিলেছিল ভাল। কিন্তু, কাজ যে অনেকটাই বাকি, এ দিনের ঘটনায় তা কবুল করছেন পুলিশ কর্তারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন