একটা সরকারি সিলমোহরের অপেক্ষায় পাঁচ-পাঁচটা বছর কেটে গিয়েছিল নিশ্চুপে। বাঁকা কথা, তির্যক হাসি, ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার সেই পর্ব শেষে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে পেলেন ওঁরা— ৬৪ জন মনো সামাজিক প্রতিবন্ধী।
হ্যাঁ, ওঁদের সরকারি পরিচয় এখনও এটাই। কিন্তু ওঁরা সুস্থ হয়ে নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী বাছাই করতে পারার পরেও পরিচয়টা অবশ্য বদলায়নি। কেন? তার কোনও সদুত্তরও মেলেনি কর্তাদের কাছে।
লড়াইটা শুরু হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। গত অক্টোবরে কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের তালিকায় নাম তুলে যে নতুন দরজা খুলেছিল, এ বার সে সুযোগ এল বহরমপুরের মানসিক হাসপাতালে। সেখানকার ৬৪ জন ‘মনো সামাজিক’ প্রতিবন্ধীদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন শেষতক গ্রহণ করা হল।
রবিবার বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে জেলা নির্বাচন দফতরের পক্ষ থেকে তাদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন আবেদনকারীরাও।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলেন, ‘‘এ বছর আমাদের লক্ষ্য, এক জনও যেন ভোটার তালিকার বাইরে না থাকেন। সেই লক্ষ্যেই তাঁদের নাম তোলার
কাজ চলছে।’’
তাঁর দাবি, জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার জনের নাম তোলা হয়েছে। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার প্রশান্ত কুমার চৌধুরী এ দিনের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘এখানকার আবাসিকেরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন ভাবতে পারিনি। প্রশাসন ভোটার তালিকায় নাম তোলার ব্যবস্থা করে দিল।’’
ওই হাসপাতালের যাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন তাঁদের পুর্নবাসনের কাজ করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার মুর্শিদাবাদের প্রোগ্রাম ম্যানেজার অদিতি বসু বলেন, ‘‘হাসপাতালের আবাসিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করতে গিয়ে ভোটার কার্ড না থাকায় সমস্যা হয়েছিল। বছর পাঁচেক আগে আমরা তাঁদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু তখন তা নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছিলেন।’’
ওই সংস্থার পক্ষে রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘মনো সামাজিক প্রতিবন্ধীরা যাতে সাধারণ মানুষের কাছে চিহ্নিত হয়ে না যান সে জন্য মানসিক হাসপাতালের ঠিকানা লেখা থাকবে। পরিবার-সমাজ এবং রাষ্ট্র তাঁদের যে চোখে দেখত এত দিন, এই স্বীকৃতির পরে আশা করি তার বদল ঘটবে।’’