দলে ভারী ছাত্রেরাই

নবদ্বীপের স্কুল শিক্ষকের বাড়ি সোমবার সন্ধ্যায় হামলার ঘটনায় মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের অধিকাংশই দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫২
Share:

শিক্ষকের বাড়ির সামনে গন্ডগোল। সোমবার নবদ্বীপে। —নিজস্ব চিত্র।

নবদ্বীপের স্কুল শিক্ষকের বাড়ি সোমবার সন্ধ্যায় হামলার ঘটনায় মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের অধিকাংশই দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।

Advertisement

কিশোর বা সদ্য যুবাদের ভিতরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি এমন অসহিষ্ণুতা, হিংসার প্রবণতা আমজনতার পাশাপাশি সমাজবিদদের উদ্বিগ্ন করেছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ চিরকাল শিক্ষিত, উদারপন্থী মানসিকতার ধারা বহন করেছে। সেখানকার ভাবী প্রজন্মের এ হেন স্খলন অবিলম্বে প্রতিরোধ করা দরকার বলে মনে করছেন সুশীল নাগরিকেরা। এর মধ্যে যে কোনও রকম রাজনৈতিক ইন্ধনেরও নিন্দা শোনা গিয়েছে সর্বস্তরে। যদিও ধৃতদের প্রায় প্রত্যেকের পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ইচ্ছে করে ঘটনার রাজনীতিকরণ হচ্ছে। তাঁদের দাবি, ধৃতরা সোমবার বিভিন্ন কারণে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কোনও কারণ ছাড়াই পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ধৃতদের মঙ্গলবার নবদ্বীপের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৮, ৩৫৪এ, ৩২৩, ৩০৭, ৫০৬, ৩৭৯ এবং ৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ধৃত ১১ জনের মধ্যে দুই উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে এ দিনই জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বাকি ন’জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে। পুলিশকে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার এই মামলার নথি আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক নীলম শশী কুজুর।

Advertisement

গত সপ্তাহে কাশ্মীরে সিআরপিএফের কনভয়ে জঙ্গি হানা নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায় গত সোমবার তাঁর বাড়িতে বিজেপির সমর্থকেরা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়দীপ ঘোষ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করে। এঁদের মধ্যে বিজেপির নবদ্বীপ উত্তর মণ্ডলের যুব মোর্চার সভাপতি তন্ময় কুণ্ডু রয়েছেন।

জয়দীপবাবু দাবি করেছিলেন, জনাপঞ্চাশের একটি দল তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। তিনি সেই সময় বাড়ি ছিলেন না। ছিলেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী এবং সন্তান। জয়দীপ বাবুর অভিযোগ, “হামলাকারীরা আমায় খুঁজছিল। অকথ্য গালিগালাজ করছিল। তারা জিনিসপত্র ভাঙচুর করে এবং ঘরে ঢুকে আলমারি থেকে সোনার গয়না লুট করে। যাওয়ার সময় ওরা বিজেপির শ্লোগান দিচ্ছিল।”

শিক্ষকের বাড়িতে এই হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাতেই পথে নামে তৃণমূল। প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহার বক্তব্য,“ নবদ্বীপের বুকে এমন ঘটনা এই প্রথম। কোনওদিন কোনও মতামত প্রকাশের জন্য এ ভাবে হামলা হয়নি। এটা বিজেপির সংস্কৃতি।’’ এর পাল্টা বিজেপির নদিয়া জেলা (উত্তর) সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, “বিজেপির কেউ এই ঘটনায় জড়িত ছিল না। আসলে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে। কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পর গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যের মানুষের বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে যে অখণ্ডতা বজায় রাখতে বিজেপির বিকল্প নেই। তাই প্রশাসন কে কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে তৃণমূল।” বিজেপির আরও দাবি, তাঁদের সমর্থকদের কথা বলার জন্য ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ধৃতদের মধ্যে থাকা এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাবা দাবি করেন, “ ঘটনার সন্ধ্যায় ও রাধাবাজার গিয়েছিল গেঞ্জি কিনতে। অনেকক্ষণ বাড়ি ফিরছে না দেখে খোঁজ করতে গিয়ে শুনি ওকে পুলিশে ধরেছে।” বুড়োশিবতলার বাসিন্দা দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর বাবার বক্তব্য, “ও এ দিন সন্ধ্যায় দেওঘর থেকে নবদ্বীপে ফিরেছে। যখন রাধাবাজার দিয়ে ফিরছিল সেই সময় পুলিশ ওকে ধরে।” আর এক ছাত্রের পরিবারের দাবি, বইয়ের ব্যাগ নিয়ে সে রাধাবাজারে পড়তে যাচ্ছিল। সেই সময় পুলিশ তাকে ধরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন