ফরাক্কা এনটিপিসিতে শ্রমিক বিক্ষোভ।
এনটিপিসি-র ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জট কাটল না বুধবারও!
মঙ্গলবার দুপুরে এনটিপিসির পূবারুণ আবাসন চত্বরে কর্মরত অবস্থায় রেকাবুদ্দিন শেখ নামে এক ঠিকাকর্মী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। তারপর থেকেই ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ চালাচ্ছেন শ্রমিকেরা। এনটিপিসির কর্তৃপক্ষ অবশ্য গোড়া থেকেই সে দাবিকে পাত্তা দেননি। বুধবার বিকেলে লিখিত বিবৃতি দিয়ে সংস্থার তরফে জানানো হয়, ‘শ্রমিকদের অবাস্তব ও অযৌক্তিক দাবি মানা সম্ভব নয়। এনটিপিসির নিয়ম মতো যা যা সুবিধা একজন মৃত শ্রমিক পরিবারের প্রাপ্য তা দেওয়া হবে।’
শ্রমিকেরা অবশ্য তাঁদের দাবিতে অনড়। বুধবার দিনভর তাঁরা এনটিপিসির প্রধান ফটক থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে অবস্থান বিক্ষোভ জারি রাখেন। রাত অবধি তা চলেছে। কথা ছিল, সন্ধ্যের সময় রেকাবুদ্দিনের দেহ ময়নাতদন্তের পরে নিয়ে আসা হবে ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চে। কিন্তু মালদহের পুলিশ কর্তারা অশান্তির আশঙ্কায় সে পথে যাননি। পুলিশ ময়নাতদন্তের পরে দেহ রেকাবুদ্দিনের বাড়ি মালদহের সুজাপুরে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মৃতের পরিজনেরা দেহ নিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসাও হয়। গোটা ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। অবস্থা বেগতিক বুঝে রাত ৮টা নাগাদ দেহ নিয়ে ফিরিয়ে আনা হয় ফরাক্কায় শ্রমিকদের ধর্ণা মঞ্চের সামনে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা নিজেরাই ‘সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমর চক্রবর্তী স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ ও চাকরির আশ্বাস না পাওয়া অবধি কর্মরত সব ঠিকা শ্রমিক তাঁদের কাজ বন্ধ রাখবেন। আজ, বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে অবরোধ কর্মসূচিও রয়েছে তাঁদের। কমিটির তরফে হুঁশিয়ারি, প্ল্যান্টে ঢুকতে দেওয়া হবে না কোনও কর্মীকেই।
শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে বুধবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনও প্রভাব পড়েনি বলে খবর। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মুখ্য জনসংযোগ অধিকর্তা শৈবাল ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৬টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। কর্মীরা কাজে যোগ না দিলে বৃহস্পতিবার থেকে উৎপাদন ব্যাহত হবে।’’ এ দিন আর নতুন করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আর আলোচনায় বসেননি এনটিপিসির কর্তারা।
মঙ্গলবারই সিটু ‘সংগ্রাম কমিটি’-র দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। এ দিন তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বিক্ষোভরত শ্রমিকদের দাবির প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়। জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি সোমেন পাণ্ডে বলেন, ‘‘২০০৯ সালে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে এনটিপিসির ফরাক্কার কর্তাদের সঙ্গে যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয় তাতে শ্রমিকদের জন্য ওয়েলফেয়ার ফান্ড তৈরির কথা ছিল। তা আজও রূপায়িত হয়নি।’’ তবে সিটু বা তৃণমূল কেউই বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবায় এ ভাবে ধর্মঘটকে সমর্থন করেননি।