অঙ্গনওয়াড়ি থেকে বিলি করা এই ধরনের ছাতুর প্যাকেট। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পেরোলেই আর মিড ডে মিল নেই। কিন্তু হাড়ভাঙা পরিশ্রম রয়েছে। অপুষ্টিতে ভোগা এমন রুগ্ণ কিশোরীদের জন্য কিংবা স্কুলছুট মেয়েদের রোগভোগের হাত থেকে বাঁচাতে সরকারের এ বার নয়া দাওয়াই— ‘পুষ্টি’।
জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সি কিশোরীদের মাসে প্রায় চার কেজি করে পুষ্টিকর ছাতু দেওয়া হবে নয়া প্রকল্পে। তা ছাড়াও স্কুলের গণ্ডির বাইরে পড়ে থাকা ১১-১৪ বছর বয়সি মেয়েদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। তারা প্রতি দিন ১৭০ গ্রাম করে ছাতু পাবে। এ জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক কেজি ওজনের একটি করে ছাতুর প্যাকেট দেওয়া হবে তাদের। আগামী সপ্তাহে নদিয়ার চারটি ব্লকে এই প্রকল্প চালু হবে। প্রকল্পের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘সবলা-কন্যাশ্রী কনভারজেন্স প্রোগ্রাম’। এবং ছাতুর নাম রাখা হয়েছে ‘পুষ্টি’।
জেলার প্রায় ১ লক্ষ ৫৮ হাজার মেয়েকে এই প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সি অন্তত ১১০০টি স্কুলছুট মেয়েও রয়েছে।
নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “আপাতত চারটি ব্লকে এই প্রকল্প চালু করতে চলেছি আমরা। পরে সব ব্লকেই চালু করা হবে। এর ফলে ওই কিশোরিদের যেমন উপকার হবে, তেমনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ছাতু তৈরি করে আয় করার সুযোগ পাবেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এই প্রকল্পের জন্য ঋণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।”
কিন্তু হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগ?
জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, ৬-১৪ বছর বয়সি ছাত্রীরা স্কুলে মিড ডে মিল পায়। তা ছাড়াও ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পুষ্টিকর খাবার পায়। কিন্তু ১১-১৪ বছর বয়সি স্কুলছুট মেয়েরা এ ধরনের সুযোগ পেত না। আবার ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সি কিশোরীদেরও সরকারি ভাবে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হতো না। ফলে তাদের জন্য কিছু করতেই এই উদ্যোগ।
রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরই ‘সবলা-কন্যাশ্রী কনভারজেন্স প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে তাদের পুষ্টিকর ছাতু দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। গত বছর গোটা ছোলা ও বাদাম দেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে অবশ্য ছাতু দেওয়ার নির্দেশ আসে।
আইসিডিএসের জেলার প্রকল্প আধিকারিক অশোককুমার পোদ্দার বলেন, ‘‘গম, বাদাম, ছোলা দিয়ে তৈরি ছাতুতে চিনি মেশানোই থাকবে। ফলে জল দিয়ে গুলে খেলেই হবে। এর গুণাগুণও অনেক।’’ অশোকবাবু আরও জানান, জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ঋণ দিয়ে ছাতু মিলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা ছাড়াও এফসিআই থেকে তাঁদের গমও দেওয়া হচ্ছে। আপাতত নদিয়ার হাঁসখালি ব্লক এবং নাকাশিপাড়া ব্লকে একটি করে স্বনির্ভরগোষ্ঠী ছাতু তৈরি শুরু করেছে। হাঁসখালিতে তৈরি ছাতু হাঁসখালি এবং রানাঘাট ২ ব্লকে দেওয়া হবে। আর নাকাশিপাড়ায় তৈরি ছাতু নাকাশিপাড়া এবং কালীগঞ্জে দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে সব ব্লকে একটি করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে এই ধরনের ছাতু তৈরি করা হবে।