সুদিনের আশায় ছোট বেকারি

বাড়ির বারান্দা লাগোয়া ছোট্ট দোকানে এমনি সময়ে মিলত গুঁড়ো চা পাতা, বিস্কুট, লজেন্স, চানাচুর, পাউরুটি থেকে খাতা, পেন, টর্চের ব্যাটারি এমনকি হাঁসের ডিম পর্যন্ত।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভাশিস সৈয়দ

নবদ্বীপ ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৪৪
Share:

দুয়ারে বড়দিন। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পড়তেই গলির মোড়ের হারুদার দোকানটা কেমন যেন একটা স্বপ্নের দেশ হয়ে উঠত। বাড়ির বারান্দা লাগোয়া ছোট্ট দোকানে এমনি সময়ে মিলত গুঁড়ো চা পাতা, বিস্কুট, লজেন্স, চানাচুর, পাউরুটি থেকে খাতা, পেন, টর্চের ব্যাটারি এমনকি হাঁসের ডিম পর্যন্ত। কিন্তু, ডিসেম্বরের শেষ কটা দিন লালনীল আলোর মালা পড়ে, কেকের পসরা সাজিয়ে সাদামাটা দোকানটাই প্রত্যন্ত মফস্সলের পাড়াকে জানান দিত বড়দিন আসছে।

Advertisement

নদিয়া-মুর্শিদাবাদের পাড়ায় পাড়ায় এমন দোকান অনেক ছিল। এলাকা ভেদে দোকানির নাম বদলে যেত। এখনও আগের মতো এ ভাবেই বড়দিনের কেক কেনাবেচা হয় নদিয়া মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায়। কয়েকদিন আগেও যারা বহরমপুরের পাড়ায় পাড়ায় চায়ের দোকানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডায় মশগুল থাকত। এখন তাঁদের চরম ব্যস্ততা। এখন হয়তো দোকানের চাকচিক্য বেড়েছে। বেড়েছে শুধুমাত্র কেকের দোকান। পাড়ার মোড়ে টেবিল পেতে, ছাতায় টুনি ঝুলিয়ে লাল-নীল-সবুজ রঙিন পাতলা পলিথিন কাগজে মোড়া হরেকরকমের কেক সাজিয়ে তেমনই বসেছে। বদলে গিয়েছে কেকগুলো। তবে এরই মাঝে ডালপালা মেলেছে নামি সংস্থার দামি দোকান। অথচ মাত্র বছর দশ-বারো আগেও কেক-চিত্র এমন ছিল না। গ্রাম কিংবা মফস্‌সলেও তখনও বড় বড় কোম্পানির ঝাঁ চকচকে কেক গাঁ গঞ্জে সহজলভ্য হয়নি। সে সময় কৃষ্ণনগর থেকে কান্দি, রানাঘাট থেকে রঘুনাথগঞ্জ সর্বত্র ছিল অগুন্তি স্থানীয় বেকারির রমরমা। এবং তাঁদের তৈরি কেকেই দিন বড় হয়ে উঠত। কৃষ্ণনগর বহরমপুর বা নবদ্বীপের মতো বড় শহরের বাছাই করা কয়েকটি দোকান ছাড়া জেলার সর্বত্র স্থানীয় বেকারির কেকেরই রমরমা ছিল।

কিন্তু গত এক দশকে সেই সব স্থানীয় বেকারির বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও এখন নামী কোম্পানির কেকে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যা দু’-একটা বেকারি টিঁকে আছে, তারা কেক বানায় না। হাওড়া, নৈহাটি কিংবা ব্যান্ডেলের বেকারি থেকে কেক এনেই বড়দিনের বাণিজ্য সারে। এমনটাই জানাচ্ছেন বেকারি মালিকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এখন মানুষের রুচি এবং ক্রয় ক্ষমতা দুটোই বেড়ে গিয়েছে। ব্যাপক বিজ্ঞাপনের দৌলতে প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে গিয়েছে বড় কোম্পানির কেকের স্বাদ-গন্ধ। নদিয়া জুড়ে এক সময়ে কয়েকশো বেকারি ছিল। সেই বেকারির সংখ্যা কমে এখন সাকুল্যে একশো। জানান নদিয়া জেলা বেকারি ফেডারেশনের সম্পাদক সুভাষচন্দ্র সাহা। চল্লিশ বছর বেকারির সঙ্গে যুক্ত সুভাষবাবু বলেন, “আমাদের ভরসা গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষ। যাদের পঁচাত্তর বা একশো টাকা দিয়ে চকচকে মোড়কের ২৫০ গ্রাম কেক কেনার ক্ষমতা নেই। এখনও কুড়ি থেকে পঁচিশ টাকায় তিনশো বা সাড়ে তিনশো গ্রাম ওজনের কেক শুধু বেকারিই দিতে পারে। সেটা টাটকা এবং সেখানে কোন লোক ঠকানো চমক নেই। বড় কোম্পানির প্রচারের কাছে এখন আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।”

Advertisement

বড়দিন উপলক্ষ্যে বহরমপুরের কাদাই বাজারের এক নামী কেকের দোকান মালিক সঞ্জয় দে জানান, প্লাম কেক ছাড়াও ফ্রুট কেক দেদার বিক্রি হচ্ছে। তবে এখানে পিছিয়ে নেই স্থানীয় বেকারিও। বহরমপুরের গোরাবাজারের বেকারি মালিক সঞ্জয় সাহা জানান, বড়দিনের জন্য এখন পর্যন্ত ৫ হাজার পাউন্ড কেক বিক্রি হয়েছে। ফের নতুন করে কেক বানাতে হচ্ছে। বড়দিনকে সামনে রেখে প্রতিবছর এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বহরমপুরের বিভিন্ন জনবহুল ও ব্যস্ততম মোড়ে টেবিল পেতে তার উপরে থরে থরে কেকের প্যাকেট সাজিয়ে আজও বসেন। আগেরই মতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন