—নিজস্ব চিত্র।
দেড়শো প্যাকেট আর নিরানব্বইটা ভোট!
কিছুতেই হিসেবটা মেলাতে পারছিলেন না জামানত খোয়ানো প্রার্থী। সে বার নদিয়ার পুরভোটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের টিকিটে নির্বাচন লড়ে মাত্র নিরানব্বইটা ভোট পেয়ে তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না তাহলে ভোটের দিন বাকি ছেচল্লিশটা প্যাকেট কারা খেল? তাঁর হয়ে খাটাখাটনি করা ছেলেদের জনে জনে জিজ্ঞাসা করেও ধাঁধাঁটা দূর করতে পারেননি তিনি।
এ ঘটনা বেশ কয়েকবছর আগের হলেও ভোটের দিন রণক্লান্ত কর্মীদের খাওয়া-দাওয়ার সাধ্যমতো ব্যবস্থা রাখে সব দলই। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞজনেরা বলেন তেল চুঁইয়ে পড়া ঢাউস প্যাকেট দেখলেই ধরে নিতে হবে তা ক্ষমতাসীন দলের। অন্য দিকে চুপসে থাকা শুকনো প্যাকেট ইঙ্গিত দেয় সেটি অ-শাসকের। ভোটের ভোজে শহরাঞ্চলে চকচকে ফয়েলে মোড়া চিকেন বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস, মিক্সড-চাউমিনের চাহিদা দিন কে দিন বাড়লেও গ্রামের ভোটে মাংসভাতই প্রথম পছন্দ ছিল সব রাজনৈতিক দলের কর্মীদের। কিন্তু সাম্প্রতিক ভাগাড় কান্ডের প্রভাব পঞ্চায়েত ভোটের মেনুতেও পড়েছে।
সবাই না হলেও ভোটের ভোজ থেকে মাংসকে বাতিল করেছেন নদিয়া মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকার দলীয় নেতৃত্ব। তাঁরা আস্থা রাখছেন ডিমের ঝোল ভাতেই। কোথাও আবার গরমের কথা ভেবে টক ডাল, সাদা দইয়ের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি হাতে গড়া রুটি-সবজি-কলা, লুচি-তরকারি-মিষ্টির ব্যবস্থাও হচ্ছে অনেক জায়গায়।
ভোটের দিন কর্মীদের কি খাওয়াচ্ছেন? ভোটের দিন দলীয় কর্মীদের কি খাওয়াবেন? প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই হরিহরপাড়ার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মির বাদাম আলির চট জলদি জবাব “কেন, বোমা খাওয়াবো কর্মীদের!” ইঙ্গিতটা শাসকদলের নির্বাচনী সন্ত্রাসের দিকে। একই প্রশ্নের উত্তরে লালগোলা ব্লক তৃণমূল নেত্রী রুমা বন্দ্যোপাধ্যায় মুচকি হেসে জানান “ সকালে ছোলা-মুড়ি আর দুপুরে রুটি-তরকারি খাওয়ানোর কথা হয়েছে। মাংস-ভাত খাওয়ানোর মত অর্থবল কোথায়!”
ভোটের খাওয়া দাওয়া প্রসঙ্গে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি গৌতম পালের পাল্টা প্রশ্ন, “ভাগাড়ের মাংস কেলেঙ্কারি জানার পর কোন ভরসায় লোকে ও জিনিস খাবে বলুন তো? আমরা দলীয় কর্মীদের জন্য লুচি আলুরদমের ব্যবস্থা করেছি।” আবার সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাস বলেন “এখন নয় ভাগাড় কান্ড প্রকাশ্যে এসেছে, কিন্তু আমরা কোনদিনই কর্মীদের মাংস-ভাত খাওয়ানোর বিলাসিতা দেখাইনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবেনা। রুটি তরকারিই যথেষ্ট।’’
তবে মাংস-ভাতে এখনই ভরসা রাখছেন স্বরূপগঞ্জের তৃণমূল নেতারা। নবদ্বীপ ব্লকের শাসকদলের সজল কর জানাচ্ছেন “ রবিবার দুপুরে কর্মীদের জন্য মুরগির মাংস ভাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে শর্ত একটাই জ্যান্ত মুরগি সামনে কেটে রান্না করতে হবে। আর ভোটের দিন মাংসভাতের সময় কোথায়। ওই দিন ডিমের ঝোল-ভাত।” একই ভাবে নওদা ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কান্দি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পার্থপ্রতিম সরকার বলেন, “সকালে টিফিনে পাউরুটি, কলা, মিষ্টি। দুপুরে কোথাও ভাত-ডাল-তরকারি-ডিমের ঝোল কোথাও মুরগির মাংস।” তবে সাবেক আমিষ নয়, বিজেপি আছে নিরামিষেই। নবদ্বীপ শহর মণ্ডলের (উত্তরাঞ্চল) বিজেপির সাধারন সম্পাদক আনন্দ দাস বলেন “আমাদের ভাই ভাতের সঙ্গে টকের ডাল, সবজি।”