ক্যানসারে বেড মেলেনি, হাসপাতাল চত্বরেই সারেজান

স্ত্রীর অবস্থা সহ্য করতে না-পেরে বারবার ডাক্তারদের কাছে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরেছেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে আসা টোটোচালক কিতাব শেখ।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

কলকাতা ও হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৩
Share:

কলকাতার চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল চত্বরে শুয়ে সারেজান বিবি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

চত্বরে পড়ে থাকা ‘স্টেজ ফোর’ ক্যানসার রোগীকে ভর্তি নিচ্ছে না হাসপাতাল। এক-দু’দিন নয়, টানা ১৭ দিন ধরে!

Advertisement

চত্বরের এক কোণে পিসবোর্ডে আছাড়ি-পিছাড়ি খাচ্ছেন সারেজান বিবি। স্তন ক্যানসারের শেষ পর্যায়ে তাঁর এই প্রাণান্তকর যন্ত্রণার সাক্ষী থাকছে কলকাতার নামী ক্যানসার হাসপাতালের ভিড়ে ভরা চত্বর।

স্ত্রীর অবস্থা সহ্য করতে না-পেরে বারবার ডাক্তারদের কাছে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরেছেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে আসা টোটোচালক কিতাব শেখ। অভিযোগ, প্রত্যেক বারই জবাব মিলেছে— ‘‘হঠো এখান থেকে!’’ অসহায় ভাবে তিনি কখনও স্ত্রীর মাথায় হাওয়া করছেন, হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, আর মৃত্যুকে এগিয়ে আসতে দেখছেন।

Advertisement

হরিহরপাড়ার চোঁয়ার বোরাকুলি গ্রামের লোকই ৩৭ হাজার টাকা চাঁদা তুলে দিয়েছিল কিতাব শেখের হাতে। বহরমপুরে কিছু দিন চিকিৎসার পরে তাঁরা উঠে বসেছিলেন লালগোলা প্যাসেঞ্জারে। শিয়ালদহ থেকে সোজা হাজরা মোড়ের চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল। কিন্তু লাভ কী হল?

বুধবার বিকেলে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছেন সারেজান, ‘‘আর পারছি না মা গো, বিষ দাও!’’ উদভ্রান্ত কিতাব বলেন, ‘‘প্রথম দিন ডাক্তারবাবু কাগজপত্র দেখে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। কিন্তু এক রাত রেখেই ‘বেড আটকে রাখা যাবে না’ বলে বউকে বার করে দিলেন। আমি ওকে নিয়ে কোথায় যাব? তাই চত্বরেই পড়ে রয়েছি।’’

একটু থেমে কিতাব আবার বলেন, ‘‘রোজ ডাক্তারবাবুদের কাছে গিয়ে হাতেপায়ে ধরি। কখনও ওঁরা নানা টেস্ট করাতে বলেন। করিয়ে আসি। কেমোথেরাপি-র জন্য রক্ত দিতে হবে বলে রক্তও জমা দিয়ে এসেছি। তা-ও ওঁরা সারেজান ভর্তি নিলেন না!’’ তিনি জানান, এনআরএস-এ পিপিপি মডেলের ল্যাবে টেস্ট করাতে পাঠানো হয়েছিল তাঁদের। ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ‘‘আমার পকেটে এখন মোটে দু’হাজার টাকা পড়ে। দু’বেলা সামনে চায়ের দোকান থেকে পাউরুটি খেয়ে আছি’’— কাঁদোকাঁদো গলায় বলেন কিতাব।

এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালের মানবিকতা কি শেষ?

চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের অধিকর্তা তাপস মাজির দাবি, ‘‘এ রকম কেউ পড়ে রয়েছেন, সেটাই তো জানতে পারিনি। খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত ওঁকে ভর্তি করা হবে।’’

এ রকম মুমূর্ষু রোগীকে এক দিন ভর্তি রেখে কেন পথে নামিয়ে দেওয়া হল? তাপসবাবুর বক্তব্য, ‘‘কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ওঁর মনে হয় কেমোথেরাপি দরকার, কিন্তু শরীরে রক্ত নেই। এই সব ক্ষেত্রে দূরের রোগীদের ভর্তি রাখারই কথা, কেন সেটা হয়নি আমি দেখব।’’ কেন ১২ হাজার টাকা দিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হল? অধিকর্তা বলেন, ‘‘সেটাও খোঁজ নিতে হবে। এটা সকলকে করানোর কথা নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন