কমরেড ছিল, হল বিস্তারক

শরৎ আগে সিপিএম করতেন, এখন বিজেপি। এত দিন শুনে এসেছেন ‘জোনাল’, ‘লোকাল’ ও ‘ব্রাঞ্চ’, ‘বুর্জোয়া’ আর ‘কমরেড’। মার্ক্সবাদের মতো এই সব বিদেশি শব্দ কবেই আটপৌরে বাংলা হয়ে গিয়েছে! এমনকি চলকে ঢুকেছে রোজকার জীবনেও। কোনও দিন রাজনীতির দিক না মাড়িয়েও চায়ের ঠেকে পুরনো বন্ধুকে ঢুকতে দেখেই রব ওঠে— “এত দিন কোথায় ছিলে কমরেড?”

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৪
Share:

আহা-ভাষা: কার্যালয় হয়েছে ‘কার্ষ্যালয়’। নদিয়া জেলা হস্তশিল্প মেলায়। নিজস্ব চিত্র

তাঁর নতুন দলের নেতা ‘মণ্ডল সভাপতি’ শুনে একটু থতমতই খেয়ে গিয়েছিলেন মাঝবয়সি শরৎ মণ্ডল। এত দিন মন্ডল বলতে তিনি নিজের পদবিটুকুই জেনে এসেছেন। আর জেনেছেন সপ্তর্ষিমণ্ডল। সেই ‘মণ্ডল’ এখন নেমে এল রাজনীতির ময়দানে?

Advertisement

শরৎ আগে সিপিএম করতেন, এখন বিজেপি। এত দিন শুনে এসেছেন ‘জোনাল’, ‘লোকাল’ ও ‘ব্রাঞ্চ’, ‘বুর্জোয়া’ আর ‘কমরেড’। মার্ক্সবাদের মতো এই সব বিদেশি শব্দ কবেই আটপৌরে বাংলা হয়ে গিয়েছে! এমনকি চলকে ঢুকেছে রোজকার জীবনেও। কোনও দিন রাজনীতির দিক না মাড়িয়েও চায়ের ঠেকে পুরনো বন্ধুকে ঢুকতে দেখেই রব ওঠে— “এত দিন কোথায় ছিলে কমরেড?”

এখন ‘জোনাল’ গিয়ে ‘এরিয়া’ এসেছে। সিপিএম গিয়ে তৃণমূল। পায়ে পায়ে এসেছে বিজেপি। রক্তিম বসন্ত আর আসেনি, শরৎ তাই গেরুয়া ধরেছেন। তাঁকে শিখতে হচ্ছে নতুন ধারাপাত— ‘কার্যকর্তা’, ‘বিস্তারক’, ‘কার্যক্রম’...। যাকে চিনেছিলেন বুথ কমিটি বলে, এখন শুনছেন তার নাম ‘শক্তি প্রমুখ’। শাখা সংগঠনের নাম ‘মোর্চা’। যারা আরএসএস-এর সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে তাদের তকমা হল ‘প্রচারক’, ‘সর কার্যবাহক’, ‘প্রান্ত সঙ্ঘচালক’ এই সব।

Advertisement

নবাবি-বাদশাহি আমলে সে দিনের শরৎ-হেমন্তেরা আরবি-ফারসি-তুর্কি চিনে মালিকের নেকন়জরে ছিলেন। ব্রিটিশ চেনাল পার্লামেন্ট আর পুলিশ। গাঁধীজি শেখালেন ‘সত্যাগ্রহ’। কালে কালে বন্দে মাতরম্ আওড়ানো ছেড়ে ‘ইনক্লাব (ইনকিলাব) জিন্দাবাদ’ বলে চেঁচানো প্র্যাকটিস হল। এখন আবার ‘জয় শ্রীরাম’! সংস্কৃতের রমরমা! সত্যযুগ ফিরে এল বলে!

এ সব তো গেল ‘সাংবিধানিক’ শব্দ। ‘অ্যাকশন’ শব্দগুচ্ছ আবার যুগে-যুগে অনেকটাই অব্যয়। যেমন পেটো, মাস্কেট, ওয়ানশটার। নতুন প্রয়োগ বরং অনুব্রত মণ্ডল-প্রণীত ‘পাঁচন’, ‘চড়াম চড়াম’ বা ‘গুড় বাতাসা’। চেনা শব্দের অচেনা তো বটেই, চমক লাগানো ব্যবহার। যাকে বলে, রিলিজেই হিট!

কবি দেবদাস আচার্য বলছেন, “সামাজিক ও অর্থনৈতিক বদলের সঙ্গে সব ভাষাতেই নতুন-নতুন শব্দ ঢোকে। চেনা শব্দের নতুন মানে তৈরি হয়। এতে নতুন শব্দ, নতুন প্রয়োগ পায় ভাষা। বাংলা তার ব্যতিক্রম নয়।”

সেই যে শোনা গিয়েছিল শাসকের হাড়-জ্বালানো টিপ্পনী— ‘টাটা হয়ে গেল টা-টা!’ বাংলা নয় বুঝি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement