পুরোদমে প্রচার কবে, প্রশ্ন কংগ্রেসেই

সময়টা ২০১০। পুরভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হতেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলির মতো নদিয়ায় জোরকদমে প্রচারে নেমেছিল কংগ্রেস। জেলার সবর্ত্রই দেওয়াল লেখা থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। কর্মীদের উৎসাহ, উদ্দীপনায় কিছু একটা করে দেখানোর ভঙ্গি স্পষ্ট। কাট টু ২০১৫— নদিয়ার প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসনে প্রার্থীই নেই কংগ্রেসের। জেলার ১৫১টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬৩টিতে প্রার্থী দিতে পেরেছে দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৩
Share:

সময়টা ২০১০। পুরভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হতেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলির মতো নদিয়ায় জোরকদমে প্রচারে নেমেছিল কংগ্রেস। জেলার সবর্ত্রই দেওয়াল লেখা থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। কর্মীদের উৎসাহ, উদ্দীপনায় কিছু একটা করে দেখানোর ভঙ্গি স্পষ্ট।

Advertisement

কাট টু ২০১৫— নদিয়ার প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসনে প্রার্থীই নেই কংগ্রেসের। জেলার ১৫১টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬৩টিতে প্রার্থী দিতে পেরেছে দল। প্রচার শুরু হয়েছে নামমাত্র। দেওয়াল লিখন নেই বললেই চলে। কোথাও যেন একটা তাল কেটে গিয়েছে। একাংশ কংগ্রেস কর্মী বলছেন, ‘‘এ বার তো দলের প্রার্থীরা এক প্রকার অনাথ ছেলেমেয়ের মতো মনোনয়ন জমা দিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে বহু কর্মী কার্যত বসে গিয়েছেন! আর, পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে তৃণমূল।’’

পাঁচ বছর আগে জেলা কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন শঙ্কর সিংহ। এখন ওই পদে আসীন জেলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কাছের লোক বলে পরিচিত অসীমকুমার সাহা। কিছু কংগ্রেস কর্মী বলছেন, অধীর-শঙ্কর দ্বৈরথেই তো নদিয়া জেলা কংগ্রেসের এই দশা। জেলার বহু দেওয়াল ইতিমধ‌্যেই রাঙিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। খুব একটা পিছিয়ে নেই বামেরাও। এগোচ্ছে বিজেপিও। কিন্তু, দাগ কাটছে পারছে না কংগ্রেস। ‘‘নদিয়ার রানাঘাট শহর একদিন ছিল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। আজ তা ভাবতেও কষ্ট হয়’’— বলছেন এক কংগ্রেস কর্মী। বহু কংগ্রেস কর্মীরই প্রশ্ন, ‘‘কবে পুরোদমে প্রচারে নামব?’’

Advertisement

গত পুরভাটে ১৯ ওয়ার্ড বিশিষ্ট রানাঘাট পুরসভায় সব আসনে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস। মাত্র তিনটি আসনে জয় এলেও বাকি সবক’টিতে দল ছিল দ্বিতীয় স্থানে। দেওয়াল লেখা থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার— সব কিছু মধ্যেই ছিল প্রাণ। সেই সময়ে সিপিএম, তৃণমূলের সঙ্গে যুঝতে ছুটে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এসেছিলেন অভিনেতা-সাংসদ রাজ বব্বর, দীপা দাসমুন্সি-সহ অন্য নেতারা। মধ্যমনি ছিলেন শঙ্কর সিংহ। এ বারের চিত্রটা একেবারেই অন্য।

এ বারের পুরভোটে রানাঘাট শহরের দেখভাল করছেন আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, জয়দেব মোদক, নৌশাদ আলিরা। তাঁরা তাঁরা সকলে মিলে ২০টি ওয়ার্ডের মাত্র সাতটিতে প্রার্থী দিতে পেরেছিলেন। পরে একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় সংখ‌্যাটা দাঁড়িয়েছে ছয়ে। তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন কাউন্সিলার। এ বারও ১৬ নম্বর ওয়াডে প্রার্থী হয়েছেন রানঘাট শহর কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি কজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। গত পুরসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূলের সমীর বোসকে ৩৫৪ ভোটে হারিয়েছিলেন। কজ্জ্বলবাবুও এ বার প্রথমে প্রার্থী হতে রাজি হননি। পরে কয়েকজনের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো দাঁড়ালাম। কিন্তু, দলটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু আসনে প্রার্থীই তো দেওয়া গেল না!’’

আইএনটিইউসি সভাপতি শুভেন্দুবাবু অবশ‌্য রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যই কংগ্রসের এই অবস্থা। সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। আর সেই ফাঁকে কংগ্রেস প্রভাবিত এলাকাগুলিতেও তৃণমূলের শক্তি বাড়ছে।’’ এলাকার সংখ্যালঘু নেতা নৌসাদ আলি বলেন, ‘‘প্রায় ন’মাস হতে চলল জেলা সভাপতি হয়েছেন অসীম সাহা। তিনি পুরভোটের কথা মাথায় রেখে কোথাও কোনও কমিটি গঠন করেননি। যার কারণে সংগঠনগত ভাবে কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে।’’ এক নেতার কথায়, ‘‘অন্য কেউ জেলা সভাপতি থাকলে হয়ত দলের এই অবস্থা হত না। অন্তত সব আসনে প্রার্থী দিতে এবং কয়েক’টা আসনে জিততে পারতাম।’’

সব আসনে প্রার্থী দেওয়া তো দূর, যাঁরা কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের জন‌্য কেন দল ঝাঁপাচ্ছে না? সর্বত্রই একটা ছন্নছাড়া ভাব কেন?

জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহার জবাব, ‘‘দায়িত্ব নেওয়ার অনেক দিন আগের থেকেই জেলায় দলের সংগঠনে দুর্বলতা তৈরি হয়েছিল। সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন স্তরে কমিটি গঠন করেছি। তবে, সবটা সম্ভব হয়নি।’’ তাঁর সাফাই, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি দল।’’ তবে তৃণমূলের সন্ত্রাসকে কুযুক্তি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বহু দলীয় কর্মীই।

কংগ্রেসের অবস্থাকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। রানঘাটের পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যয়ের জবাব, ‘‘কংগ্রেসকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যেই আনছি না। কিছু দিনের মধ্যেই জেলায় এই দলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’ রানাঘাটের সব আসনে তৃণমূলই জিতবে বলে তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন