তৈরি করা হয়েছে ব্যারিকেড। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে স্তব্ধ দেশ। গাঁ-গঞ্জে তার ছায়া পড়েছে। প্রশাসনের মাইক দিবারাত্র হেঁকে চলেছে— ঘরে থাকুন, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে এক পা-ও নয়! কিন্তু সে কথা শুনছে কে। থেকে থেকেই ছুটন্ত বাইক গ্রামের রাস্তা ফুঁড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সান্ধ্য মাচায় আড্ডাও বসছে কোথাও। বাজার থেকে ঘুরে আসার ছলে ক্যারম বোর্ড ঘিরে গুলতানির দুপুরও চোখে পড়ছে না, এমন নয়।
সেই চেনা ছুটির মেজাজে কখনও বা গ্রামে ঢুকে পড়ছে অচেনা ফিরিওয়ালাও। আর তাকে ঘিরে ভিড়ও জমে উঠছে অচিরে। দিনের পর দিন ঘর-বন্দি থাকা অতিষ্ঠ মানুষ পড়শি গাঁয়ে পা-ও বাড়াচ্ছে। কখনও বা কানে আসছে— নিঃশব্দে গ্রামে পা রাখছে ঘরে ফেরা ভিন রাজ্যের শ্রমিক। এ বার তাই গ্রাম বাঁচাতে রাত জাগা শুরু করেছে চাচণ্ড। লক্ষ্য একটাই— গ্রামে প্রবেশ নিষেধ।
গ্রামের বাইরে পা রাখাও নৈব নৈব চ। আর সেই অনুশাসনের প্রথম ধাপ হিসেবে শমসেরগঞ্জের আস্ত ওই গ্রামটিকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেছেন গ্রামবাসীরা। রাতে বসছে পাহারাও।
লাঠি হাতে গ্রামের মোড়ে পাহারা দিতে শুরু করেছেন চাচণ্ডের এক দঙ্গল যুবক। গ্রামের মানুষের জটলা দেখলেই এগিয়ে গিয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে ঘরে ফিরে যেতে। পরামর্শ, ঘরে থাকুন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। গ্রামপ্রহরায় থাকা আনারুল শেখ বলছেন, ‘‘আমাদের গ্রামের মানুষ লকডাউনকে অনেকটা ইদের ছুটির মতো মনে করছেন। বাধানিষেধ মানতে চাইছেন না। অনেক সময়েই গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকেরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চুপিসাড়ে ঘরে ঢুকে পড়ছে। তারপর আড্ডা-মোটরবাইক হাঁকানো চেনা অভ্যাসে সবই করছেন। এটা চলতে থাকলে গোটা গ্রাম উজাড় করে করোনাভাইরাস ছড়াবে।’’ আর তা রুখতেই তাই চাচণ্ডের এক দল যুবকের এই কড়া অনুশাসন। তা নিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে বাগবিতন্ডাও কম হচ্ছে না। দু’-একটি হাতাহাতির ঘটনাও কান এড়াচ্ছে না। কিন্তু আনারুলেরা অনড়, ‘‘এ ভাবে চলতে পারে না। এটা যে কোনও উপায়েই রুখতে হবে আমাদের।’’
চাচণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সায়রা বিবি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের যুবকেরা যে পথ দেখাল, তা সব গ্রামে যেন হয়, তা নিয়ে আমি পঞ্চায়েত সদস্যদের জানাব। এই উদ্যোগ খুবই ভাল, আমার এবং আমার দলের এর পিছনে সমর্থন আছে।’’
শমসেরগঞ্জের বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ সচেতন না হলে লকডাউন কেন, কোনও উদ্যোগই সফল হবে না। খুবই জরুরি কাজ করছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।’’
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।