Coronavirus

পেটের টানে ফিকে হয়েছে করোনার ভয়

তবে এই গলিতে যে মেয়েদের বাস, তাদের মনে শান্তি নেই। হাতের টাকা ফুরিয়েছে। আগামী দিনে কী হবে, তারও ঠিক নেই।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০২:০১
Share:

প্রতীকী ছবি

মাত্র কয়েকটা দিনেই বদলে গিয়েছে নবদ্বীপের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিপাড়া লেন। আগে সন্ধ্যা যত রাতের দিকে গড়াত ততই পাল্টে যেত ঘিঞ্জি গলিটা। হইহল্লা, চিৎকার। এখন চার দিক শান্ত।

Advertisement

তবে এই গলিতে যে মেয়েদের বাস, তাদের মনে শান্তি নেই। হাতের টাকা ফুরিয়েছে। আগামী দিনে কী হবে, তারও ঠিক নেই। আপাতত খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা হলেও উদ্বেগ কিছুতেই কাটছে না। সামনে কারও ভাইয়ের বিয়ে, কেউ আবার বাবার ওষুধের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। লকডাউন চলাকালীন রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ভাবেই রীতমতো বিপাকে পড়েছেন এলাকার যৌনকর্মীরা।

এক তরুণী বলেন, ‘‘আগে অনেক সময়ই অশান্তির মধ্যে পড়তে হত। তবে রোজগারটাও হত। এ ভাবে ঘরে বসে থাকলে সংসার চলবে কি করে? আমার উপর গোটা একটা সংসারের ভার। কী করব, কিছু বুঝতে পারছি না।’’ পাশাপাশি জানান, পেটের টানে করোনার আতঙ্ক আর সে ভাবে মনে দাগ কাটছে না। তাকিয়ে রয়েছেন লকডাউন ওঠার অপেক্ষায়।

Advertisement

এখন প্রতি দিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠছেন আরেক তরুণী। তিনি বলেন, “কী করব! কাজ নেই, হাতে পয়সাও নেই। দেরিতে উঠলে সকালের জলখাবারের খরচ বাঁচে। স্নান করে চা খাই। তারপর একেবারে দুপুরের খাওয়া। কিছু টাকা বেঁচে যাচ্ছে।” পাশের জেলায় বাড়ি তাঁর। বাবা অসুস্থ। ভাই বিয়ে করে আলাদা। মা বিড়ি বেঁধে সামান্য কিছু আয় করলেও সংসারের প্রধান খরচ দেন তিনিই। এ মাসে বাড়ি যাওয়ার প্রশ্নই নেই। টাকা নেই মায়ের হাতে। বাবার ওষুধ কেনা হবে কী করে? সেই ভাবনাই কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁকে।

প্রায় একই ছবি শান্তিপুরে। কাজ হারিয়ে এখানেও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অনেক মেয়ে। তবে নবদ্বীপের মেয়েদের চেয়ে এঁরা কিছুটা হলেও নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছেন। কারণ, তাঁদের পাশে রয়েছেন দুর্বারের মতো সংগঠন।। সেই সংগঠনের তরফে সুমিত্রা শাহ জানান, দুর্বারের শান্তিপুর শাখায় নথিভুক্ত সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৭৫। তাঁদের চিকিৎসা থেকে অন্যান্য নানা বিষয়ে সরাসরি সহযোগিতা করা হয়। সুমিত্রা বলেন, “আমরা এখানকার মেয়েদের হয়ে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলছি। যাতে মেয়েদের প্রতি দিনের খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কোনও অসুবিধা না থাকে।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, শান্তিপুর পুরসভা, দু-একটি মন্দির, কৃষ্ণনগরের মিশনারিদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই মেয়েদের খাবার বা অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করছে। খাওয়ার চিন্তা এখনই করতে হচ্ছে না ঠিকই। নবদ্বীপ বা শান্তিপুরের মেয়েদের বাড়ি ভাড়াও এই সময়ে লাগছে না। কিন্তু লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে কী হবে? এক যৌনকর্মী বলেন, “বয়সের কারণে উপার্জন কম কিংবা যাঁরা অসুস্থ তাঁদের কী হবে? লকডাউন কবে উঠবে, তা-ও তো বুঝতে পারছি না। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোয় আমাদের কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

সুমিত্রা জানান, এই যৌনকর্মীদের অনেকের রেশন কার্ড নেই। এই সময়ে যদি তাঁরা রেশনের খাদ্যসামগ্রী পেতেন, তা হলেও খানিকটা সুরাহা হত। তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, যাতে ওঁদের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা যায়। হাসপাতাল বা বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে কথা বলে অসুস্থদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেরই আশঙ্কা, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে কমতে পারে সাহায্য। তখন কী হবে, তা ভেবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement