প্রতিযোগিতার মঞ্চ। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
কোনটা ছেড়ে কোনটার স্বাদ নেবেন তিনি! মটন বিরিয়ানি, নাকি চিকেন চাপ? রুই কালিয়া, নাকি আলুবোখরা? ফুলকো লুচি, নাকি ফুচকার তেঁতুল জল? তার উপরে পেল্লাই সাইজের পাকা কাঁঠালের গন্ধে ম ম করছে সারা বাড়ি! তালিকা আরও দীর্ঘ। এ সবই তিনি অর্জন করেছেন বহরমপুর শহরে ইদ উপলক্ষে আয়োজিত একটি টিভি চ্যানেলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে। তিনি, অর্থাৎ এই শহরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার চল্লিশোর্ধ্ব গৃহকর্ত্রী বকুল মণ্ডল।
শুধু জেতা নয়, প্রতিযোগিতায় নেমে তিনি হারিয়েছেন মেয়ের বয়সী কলেজ ছাত্রীদেরও। সেই সুবাদে জিতেছেন বস্তা বস্তা চাল, ডাল, আলু, আটা, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কচিপাঁঠা, রুই, রসগোল্লা, কেক, সোনা ও হিরের ২টো নাকছাবি, পাঁকা কাঁঠাল-সহ ৩৩ দফা পুরস্কার। হিরে থেকে জিরে— কার্যত বাদ যায়নি কিছুই।
বহরমপুরের খাগড়া এলাকায় ‘সম্প্রীতি সঙ্ঘ ইদ উৎসব কমিটি’র উদ্যোগে গত শনিবার ইদের দিন সকাল থেকে শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা মূলক পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে আগামী কাল, বুধবার। গত রবিবার ছিল ‘দিদি নম্বর ওয়ান’। মোট প্রতিযোগী ৩৪ জন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক দিলীপ সাহা বলেন, ‘‘ওই ৩৪ জনের ‘অডিশন’ হয় গত শুক্রবার। সেখান থেকে গত রবিবারের চূড়ান্ত পর্বের জন্য ৪ মহিলা নির্বাচিত হন। তাঁদের মধ্যে তিন জন কলেজ ছাত্রী।’’
রবিবার তাঁদের নিয়ে মোট ৫ রাউন্ডের খেলায় ৮৫ নম্বর পেয়ে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ হন হোমিও চিকিৎসক তুষারকান্তি মণ্ডলের স্ত্রী বকুলদেবী। তিনি ভালবাসেন কবিতা পড়তে ও আবৃত্তি করতে। এ কথা জানিয়ে বিজয়িনী বলেন, ‘‘আমি এমন ধরনের খেলা পছন্দ করি। তাই প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলাম।’’ জেতার পরে পুরস্কারের বহর দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন— অকপটে কবুল করছেন সে কথা। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় পরিজনদের সোমবার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে ভুরিভোজও দেন তিনি।
এমন উপহার কেন? উৎসব কমিটির সম্পাদক বীরু শেখ বলেন, ‘‘চাঁদার বদলে আমরা ব্যবসায়ীদের থেকে জিনিস নিয়েছিলাম। যিনি যেমন ব্যবসা করেন, তেমনই জিনিস নেওয়া হয়। এমনকী বিনামূল্যে অনুষ্ঠানের চা জুগিয়েছেন চায়ের দোকানি।’’ পুরস্কারের অভিনবত্ব ছাড়া আরও একটি অভিনব ঘটনা ঘটিয়েছেন উৎসব কমিটি। তাঁরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে একটি সামাজিক উৎসবে রূপান্তরিত করেছিলেন। পুজোয় প্রতিবেশী মুসলিম সম্প্রদায়ের যোগদান এখন স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ইদের অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের বিষেশত মহিলাদের যোগ দেওয়া বিরল ঘটনা। সেই বেড়াটা ভাঙেছে ‘সম্প্রীতি সঙ্ঘ’।