কোর্টের নির্দেশ, কবর থেকে উঠল দেহ

ভগ্নিপতি ও দুই মামা মিলে খুন করেছে ছেলেকে— বাবার আনা এই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুর ৭ মাস পর আদালতের নির্দেশে সাগরদিঘির ব্রাহ্মণীগ্রাম শেখপাড়ায় কবর থেকে তোলা হল ২৩ বছরের এক যুবক আজহার আহমেদ ওরফে জুয়েলের মৃতদেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

শেখপাড়ার কবর থেকে তোলা হচ্ছে দেহ। — নিজস্ব চিত্র

ভগ্নিপতি ও দুই মামা মিলে খুন করেছে ছেলেকে— বাবার আনা এই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুর ৭ মাস পর আদালতের নির্দেশে সাগরদিঘির ব্রাহ্মণীগ্রাম শেখপাড়ায় কবর থেকে তোলা হল ২৩ বছরের এক যুবক আজহার আহমেদ ওরফে জুয়েলের মৃতদেহ।

Advertisement

ছেলেটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ভগ্নিপতি ও তার মামাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, খুন, অপরাধের ষড়যন্ত্রে (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ৩০২, ২০১ এবং ৩৪ ধারায়) মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, কবর থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ভাঙাচোরা বাসনপত্র বেচাকেনা করতেন আজহার। গত বছর ২৭ জুলাই ওই যুবককে তার শেখপাড়ার বাড়ি থেকে মোটরবাইকে করে তুলে নিয়ে যায় ভগ্নিপতি ও দুই মামা। রওনা হওয়ার সময় তাঁকে বলা হয়েছিল, গন্তব্য তাঁদের বাড়ি বীরভুমের নলহাটি থানার সালিসন্ডা গ্রাম। পর দিন সকালে শেখপাড়ায় আজহারের বাবা এনাত শেখকে ফোন করে তারা জানায় রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছেলের। কিন্তু পুলিশকে না জানিয়েই কোনও রকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ কবর দেওয়া হয় সাগরদিঘির শেখপাড়ার কবরস্থানে। বাবা এনাত শেখ বলেন, “এক রকম জোর করেই ছেলের দেহ কবর দিতে বাধ্য করে অভিযুক্তরা। ছেলের গায়ে অজস্র আঘাতের চিহ্ন ছিল। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত না করে ছেলের দেহ কবর দিতে রাজি হইনি আমি। কিন্তু অভিযুক্তরা ভয় দেখিয়ে এক রকম বাধ্য করে। জামাই ঘটনায় জড়িত, তাই মেয়ের উপর অত্যাচার হবে ভেবে প্রথমে চুপ ছিলাম আমিও। কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে যেন বারবার অপরাধী মনে হয়েছে। তাই দেরি হয়ে যাওয়ায় জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে ছেলেকে খুনের বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করি।”

Advertisement

আদালতের নির্দেশে সাগরদিঘি থানার পুলিশ ৭ জানুয়ারি ছেলেকে অপহরণ ও খুনের মামলা রুজু করে দুই মামা রাসেল মোল্লা, সাদল মোল্লা ও ভগ্নিপতি হাবিবুর মোল্লার বিরুদ্ধে।” যে হেতু সাগরদিঘি থেকে আজহারকে নলহাটি থানার সালিসন্ডা গ্রামে নিয়ে গিয়ে খুন করার অভিযোগ করে তার বাবা, তাই জঙ্গিপুর আদালত নলহাটি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করতে। নলহাটি থানায় সেই মতো মামলা রুজু করেন তদন্তকারী অফিসার দিবাকর বিশ্বাস। রামপুরহাট মহকুমা আদালতের কাছে মৃতদেহটি কবর থেকে তোলার অনুমতি চান। আদালতের সেই অনুমতি নিয়েই বৃহস্পতিবার দুপুরে শেখপাড়ায় কবর থেকে তোলা হয় দেহ। সেখানে হাজির ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে সাগরদিঘির বিডিও দেবব্রত সরকার ও সাগরদিঘি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসকও। এ দৃশ্য দেখতে কবরস্থানের চার দিকে ভিড় করে গোটা গ্রামের বাসিন্দারা। ভিডিও ক্যামেরায় তুলে রাখা হয় সমস্ত প্রক্রিয়াটি।

মামা ও ভগ্নিপতিদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনলেও কেন এই সন্দেহ, তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলতে পারেননি আজহারের বাবা।

তবে তার এক আত্মীয়ের সন্দেহ, তার বাবার বেশ কিছু জমি রয়েছে। বর্তমান বাজারে যার মোটা টাকা দাম। একমাত্র ছেলেকে সরিয়ে দিলে মেয়েরা সেই সম্পত্তির মালিক হবে। খুনের কারণ হতে পারে এটা।

মামলার তদন্তকারী অফিসার দিবাকর বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, “ফরেন্সিক রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।” তবে পুলিশের সন্দেহ, রেল দুর্ঘটনায় যদি ওই যুবকের মৃত্যু হয়েই থাকে তবে তার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি কেন? কেনই বা তড়িঘড়ি মৃতদেহ কবর দিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন অভিযুক্তরা। তবে খুন হয়েছে কি না নিশ্চিত না হয়ে এখনই পুলিশ অভিযুক্তদের ধরপাকড়ে যাচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement