গরমে সরকারি কর্মীদের রক্তদান শিবির করার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে কথা মেনে পুলিশ থেকে প্রশাসনিক কর্তারা যে এগিয়ে আসেননি, এমন নয়। এ বার সেই তালিকায় জুড়ে গেল ব্লক স্বাস্থ্য কর্মীদের নামও।
মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরে ও থানায়-থানায় রক্তদান শিবির করার ধুম পড়ে যায়। ওই শিবিরগুলিতে সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে লাল-নীল বাতি লাগান গাড়ি থেকে নেমে জেলাপ্রশাসনিক কর্তারাও রক্ত দান করতে কসুর করেননি। ওই বছর গরমের সময়ে রক্তের অভাব সাময়িক ভাবে মিটেছিল। পাশাপাশি উৎসব মরসুমেও ফি-বছর একই ভাবে রক্তের অভাব দেখা দেয়। কিন্তু দুর্গাপুজো উৎসবের আনন্দে মেতে থাকার কারণে রক্তদান শিবির আয়োজন হয় না বললেই চলে। ফলে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বিভিন্ন মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের আকাল দেখা দেয়।
উৎসব মরসুমে রক্তের ওই অভাব মেটাতে রবিবার শিবিরের আয়োজন করেছিলেন শুধু নয়, রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতে বহরমপুরের বিডিও রাজর্ষি নাথ নিজেই রক্ত দিলেন। এ দিন বহরমপুর বিডিও কার্যালয় চত্বরে ওই রক্তদান শিবিরের সূচনা করেন জেলাশাসক পি উলাগানাথন। তিনি বলছেন, ‘‘গ্রীষ্মের সময় এ রকম রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। সেই সময় সকলে মিলে বেশি করে শিবিরের আয়োজন করে রক্তের অভাব মেটান সম্ভব হয়েছিল। বহরমপুরের বিডিও উদ্যোগ নেওয়ায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে এগিয়ে এসেছেন, অন্যান্য ব্লক প্রশাসনও উৎসাহিত হবে।’’
এ দিন যেমন নবগ্রামের সাবিনা বিবি ‘এ’ নেগেটিভ রক্তের সন্ধানে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে হাজির হন তিনি। ছেলে হাসিম মণ্ডলকে অবিলম্বে রক্ত দিতে হবে বলে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেও রক্ত জোগাড় করতে পারেননি তিনি। ‘ওই গ্রুপের কোনও রক্ত নেই’ বলে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়। যেখানে পরিস্থিতি সামাল জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ৬০ বোতল রক্ত রানাঘাট ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এনেছে, সেখানে সাবিনা বিবিদের মত রোগীর বাড়ির লোকজনকে রক্তের সন্ধানে ঘুরে বেড়ান ছাড়া উপায় নেই!
এ প্রসঙ্গে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক তথা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলছেন, ‘‘কোনও গ্রুপের রক্ত নেই। রক্তের অভাব মেটাতে রানাঘাট ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে ৬০ ইউনিট রক্ত নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে।’’
উৎসবের মরসুমে রক্তের সঙ্কট শুরু হয়েছে সেই দুর্গাপুজোর আগে থেকেই। তার আগে এ দিনের শিবিরে রক্তদান করেছেন ৮১ জন। বহরমপুর সদর মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, রক্তসঙ্কট মেটাতে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেই অনুরোধ
রেখেছে বহরমপুর।”