চব্বিশ ঘণ্টায় দু’বার কেঁপে উঠল ধুলিয়ান

চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের কম্পন। ভোটের দিন, শনিবারের ভূকম্পনের জেরে ধুলিয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৩ জন। রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ নতুন করে কম্পনের জেরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আরও ৭২ জন ভর্তি হলেন। একই অবস্থা বেলডাঙাতেও। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সকলেরই উপসর্গ বলতে দাঁত লেগে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা, অজানা আতঙ্ক ইত্যাদি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৬
Share:

চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের কম্পন। ভোটের দিন, শনিবারের ভূকম্পনের জেরে ধুলিয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৩ জন। রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ নতুন করে কম্পনের জেরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আরও ৭২ জন ভর্তি হলেন। একই অবস্থা বেলডাঙাতেও। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সকলেরই উপসর্গ বলতে দাঁত লেগে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা, অজানা আতঙ্ক ইত্যাদি।

Advertisement

কিন্তু, দু’দিনে পরপর ১১৫ জন ভর্তি হওয়ায় বেআব্রু হয়েছে ধুলিয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো। রবিবার হাসপাতালে পৌঁছে দেখা গেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায়, ভ্যান রিকশার উপরে ঠাঁই হয়েছে রোগীদের। রোগীর পরিজনরাই ধরে রেখেছেন স্যালাইনের বোতল। ঘরের মধ্যে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁরাও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেঝেতে পড়ে। এমন অবস্থায় এগিয়ে আসেন ধুলিয়ানের কংগ্রেস ও তৃণমূলের নেতারা। তাঁদেরই উদ্যোগে ত্রিপল খাটিয়ে এক নির্মীয়মান ঘরে রোগীদের রাখা হয়। শুধু তাই নয়, আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় দুই চিকিৎসককে ডেকে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন নেতৃত্ব।

কেন রোগীদের এ ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, কেনই বা বাইরের চিকিৎসককে এসে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা পরিষেবা সামাল দিতে হচ্ছে? সদুত্তর মেলেনি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক গোলাপ হোসেনের থেকে। তবে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বলেন, ‘‘ধুলিয়ান, ভগবানগোলা, সুতি, সাগরদিঘি-সহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় শতাধিক মানুষ ভূমিকম্পের আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই মহিলা।’’ এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে তাঁর আশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘সকলেই শারীরিক ভাবে সুস্থ আছেন। অযথা আতঙ্কের কিছু নেই।’’

Advertisement

ভূকম্পনের প্রভাবে কাবিলপুর হাইস্কুলের তিনতলা স্কুল ভবনের নানা জায়গায় ফাটল ধরেছে। প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘শনিবার পড়ুয়ারা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অল্পবিস্তর জখম হয়। তবে ওই ৪৩ জনের সকলেই এখন সুস্থ।’’ একই ভাবে অন্তত ২০ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে অরঙ্গাবাদ বালিকা বিদ্যালয়ে। ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ধুলিয়ানের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘরিতে শনিবার একটি বাড়ি ধসে আহত হন সুমিরাদ্দি বেওয়া নামে এক মহিলা। তিনি অনুপনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। ফাটল ধরেছে ফরাক্কা ব্যারাজে পানীয় জল সরবরাহের মূল জলাধারেও।

অন্য দিকে, এ দিনের ভূকম্পনের জেরে বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে প্রায় ২০ জন মহিলা ভর্তি হন। তাঁরা বেলডাঙা থানা এলাকার উত্তরপাড়া, দেবকুণ্ডু অঞ্চলের বাসিন্দা। প্রত্যেকের বয়স ১০-৩০ বছরের মধ্যে। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু, ধুলিয়ানে আতঙ্ক মাত্রা ছাড়াল কেন? সামশেরগঞ্জ তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কাউসার আলি, ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আমিরুল ইসলামরা এ বিষয়ে এক মত। তাঁরা বলছেন, ‘‘ধুলিয়ানের মানুষ ভূকম্পনের সঙ্গে পরিচিত নন। তা থেকেই হয়তো কোনও অজানা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।’’ ধুলিয়ানের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াসিন শেখের কথায়, ‘‘শনিবার যখন ভূকম্পন হয়, তখন স্ত্রী রান্না করছিলেন। হঠাৎই উনুনে বসানো ভাতের হাঁড়ি নড়তে শুরু করে। তাতেই ভয় পেয়ে উনুন থেকে হাঁড়িটা নামিয়ে জ্ঞান হারায় স্ত্রী, দাঁত লেগে যায় ওর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement