নোটবন্দির বছর ঘুরেছে সপ্তাহ দুই আগে। জাল নোট কিন্তু স্বমহিমায়।
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে জাল পাসপোর্ট থেকে চোরাচালান, নানা অবৈধ কারবারের রমরমা। জাল নোট তার অন্যতম।
শুধু মুর্শিদাবাদেই জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত জাল নোট নিয়ে ৭৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৫৩.৯১ কোটি টাকা। গত শুক্রবারও বহরমপুরের ভুটিয়াবাজারে শহরে ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার জালনোট ধরা পড়ে। পুরোটা নতুন দু’হাজার টাকার নোটে। মালদহের এক বাসিন্দা-সহ তিন জনকে ধরেছে পুলিশ। ওই টাকা বাংলাদেশ থেকে মালদহ হয়ে মুর্শিদাবাদে এসেছিল। দেড় মাস আগে দৌলতাবাদ থেকে ৭৫ হাজার টাকার জাল নোট-সহ দু’জনকে ধরে পুলিশ। ধৃতদের এক জনের বাড়ি সুতিতে, অন্য জনের দৌলতাবাদের ঘাসিপুরে। এ বার বহরমপুরে জাল নোট মেলার খবরে ঝাড়খণ্ড পাকুড় থেকে মফসসল থানার পুলিশ খোঁজ নিয়ে গিয়েছে।
নদিয়ায় গত কয়েক বছরে চাপড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে জাল নোট-সহ কয়েক জন ধরা পড়েছে। জাল টাকা মিলেছে শান্তিপুরেও। নদিয়া পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের ব্যাখ্যা: মূলত ছোটদের হাতে নোট পাচার করা হয়। তারাই সীমান্ত পেরিয়ে এসে চক্রের লোকেদের হাতে টাকা পৌঁছে দেয়। পরে ‘ক্যারিয়ার’-দের মাধ্যমে সেই টাকা চলে যায় বর্ধমানে, কলকাতায়, আরও নানা দিকে।
মুর্শিদাবাদের গোয়েন্দা দফতরের এক অফিসার জানান, বাংলাদেশ থেকে জালনোট নিয়ে এসে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম চৌরিঅনন্তপুর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয় পাচারকারীরা। কালিয়াচকও জাল নোট পাচারের বড় ঘাঁটি। সমশেরগঞ্জ থানার ধুলিয়ান ঘাট হয়ে পাকুড় হয়েও জাল নোট পাচার হয়। ধুলিয়ান ঘাট পেরনোর সময়ে জাল নোট-সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধুলিয়ানের এক যুবক যে জাল নোটের কারবার করে, আবার সমশেরগঞ্জে দালালি করে। কখনও-কখনও পাচারকারীদের ধরিয়ে দিয়ে পুলিশের কাছের মানুষ সাজে। ২-৫ লক্ষ টাকার জাল নোট ধরিয়ে দিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা পাচার করে দেয়। পুলিশ সব জেনেশুনেও তাকে ব্যবহার করে পাচারকারীদের ধরতে। দৌলতাবাদ থানার সরসাবাদ, হাসানপুর, ছয়ঘরি ও দৌলতাবাদেও জাল নোটের কারবার রয়েছে। কিছু বাসিন্দা কেরল, মুম্বই, কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়ার সময়ে সঙ্গে করে জাল নোট নিয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট এজেন্টের কাছে পৌঁছে দেয়।
নোটবন্দির পরে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ রাজ্যে দু’হাজার টাকার জালনোটে ৬৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭.৫৯ লক্ষ টাকাই মিলেছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে। জাল নোট ধরা পড়ার ৮৭টি ঘটনা ঘটেছে। তার ৪৩টি মুর্শিদাবাদে, মালদহে ২২টি। গ্রেফতার ১৩৭ জন, এর ৯৬ জন দুই জেলার বাসিন্দা। তার ৯০ শতাংশ বৈষ্ণবনগরে নানা চর গ্রামের। সীমান্ত পেরিয়ে জালনোট যদি আসতে থাকে, কোটি-কোটি মানুষকে ভুগিয়ে নোটবন্দি করে কী লাভ হল, সেই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।