বিলি কার হচ্ছে মাছ ব্যবসার সামগ্রী।— নিজস্ব চিত্র
জারি করা সেই এক নিষেধাজ্ঞাই ফি বছর নতুন জারি করা হয়। কিন্তু, তার পর না থাকে নজরদারি, না বন্ধ হয় গঙ্গা থেকে ছোট ইলিশ ধরা।
কারণ হিসেবে বার বার উঠে এসেছে, জেলেদের বিকল্প কোনও আয়ের রাস্তা নেই। তাই তাঁরা গঙ্গা-পদ্মার জল ছেঁকে তুলে আনছে ছোট ইলিশের ঝাঁক। এবার সেই সমস্যার মূলে পৌঁছে সমাধানে উদ্যোগী হল মৎস দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা বিভাগ।
গঙ্গা-পদ্মায় যাঁরা ছোট ইলিশ ধরেন এমন মৎস্যজীবীদের চিহ্নিত করেছে রাজ্য মৎস্য বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলা বিভাগ। মুর্শিদাবাদ জেলা দফতরের সহ-অধিকর্তা জয়ন্ত প্রধান জানান, ছোট ইলিশ না ধরে অন্য মাছের ব্যবসা করার সুয়োগ করে দিতে এ বার ফরাক্কার গঙ্গানদীর মৎস্যজীবীদের দেওয়া হয়েছে সাইকেল, ২৪ ঘণ্টা মাছ সতেজ থাকবে এমন ৫০ লিটার আয়তনের ইনস্যুলেটর বক্স ও ওজন মাপার যন্ত্র।
চলতি মাসের মধ্যেই সমশেরগঞ্জ ও লালগোলার গঙ্গা-পদ্মার আরও মৎস্যজীবীদের দেওয়া হবে একই উপকরণ। উদ্দেশ্যে, যাতে তাঁরা ছোট ইলিশ ধরার পরিবর্তে অন্য মাছের ব্যবসা শুরু করতে পারে।
ডিমপাড়া ও বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনে সারা বছর ৯ ইঞ্চির কম দৈর্ঘের ছোট ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি রাজ্যের নদীঅঞ্চলের পাঁচটি এলাকাকে ইলিশের নিরাপদ আশ্রয় স্থল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই পাঁচটি এলাকায় জুন থেকে অগস্ট মাস, এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশ ধরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ওই পাঁচটি অঞ্চলের মধ্যে ফরাক্কা ব্যারাজ লাগোয়া পাঁচ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ওই এলাকায় সারা বছরই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে ছাপানো প্রচারপত্র বিলি হয়েছে, মাইকেও প্রচার চলছে। তাতেও লাভ হয়নি। আমাদের মনে হয়েছে, মৎস্যজীবীদের বিকল্প আয়ের জন্যই এমনটাই হচ্ছে।’’
তিনি জানান, সেই অভাব পূরণ করতেই সাইকেল- সহ মাছের ব্যবসার উপকরণ সরকারি ভাবে বিনা পয়সায় বিলি করার প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
অবলুপ্তির হাত থেকে নদীর রূপোলি ফসলকে রক্ষা করতে ইলিশের নিরাপদ আশ্রয় স্থল হিসাবে গঙ্গা-পদ্মা-ভাগীরথী-হুগলি ও সুন্দরবন এলাকা মিলিয়ে মোট ৫টি অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছে রাজ্য মৎস্য দফতর। সেই পাঁচটি অঞ্চলের মধ্যে হল— মুর্শিদাবাদের এলাকাগুলি হল, ভাগীরথী নদীর লালবাগ থেকে ফরাক্কা এবং ব্যারাজ লাগোয়া পাঁচ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল।
রাজ্যের ইলিশ সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই পরিযায়ী রূপোলি ফসলের অবাধ বংশ বিস্তারে জন্য ৯০ মিলিমিটারের কম মাপের ফাঁসজাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছ। প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ অক্টোবর সময়ের মধ্যে পূর্ণিমার পাঁচ দিন আগে ও পাঁচ দিন পরে ইলিশ ধরাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’’
দু’বছর বয়সের একটি ইলিশের ওজন হয় প্রায় ১১০০ গ্রাম। এ কথা জানিয়ে রাজ্যের ইলিশ সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাপ্ত বয়স্ক একটি ইলিশ প্রায় ২২ লক্ষ ডিম পাড়ে। তার অর্ধেক ডিম নিষিক্ত হয়। বাকিটা অনিষিক্ত। নিষিক্ত ডিমের ১০ শতাংশ ডিমপোনা বাঁচলে এক বছরেই একটি ইলিশ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ছোট ইলিশ পাওয়া যাবে। ওই ছোট ইলিশ না ধরলে এক বছর পর ৫০০-৭০০ গ্রামের ৫৫ হাজার ইলিশ মিলবে।
গঙ্গা নদীতে ফরাক্কায় ব্যরাজ নির্মাণের প্রায় পাঁচ দশক পর এ বার মার্চ-এপ্রিল মাসে ভাগীরথীর জল কমে হাঁটুজলে দাঁড়ায়। নদীর বুকে চড়া পড়ে। ফলে নদীতে মাছও কমে যায়। নদীতে কমে যাওয়া মাছের বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনে সম্প্রতি বহরমপুরের খাগড়া শ্মশান ঘাটে ও গোরাবাজার শ্মশান ঘাটে মৎস্য দফতর থেকে রুই, কাতলা ও মৃগেলের পোনা ছাড়া হয়েছে।
জয়ন্তবাবু জানান, বর্ষার সময়ে জেলেরা গঙ্গা-পদ্মা থেকে ছোট ইলিশ না ধরলে তাঁদের রুজির উপরে কোপ পড়বে। সেই জন্যই তাঁদেরগ এমন উপকরণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা বাজার থেকে মাছ কিনে ব্যবসা করে সংসার চালাতে পারে।
মৎস দফতরের কর্তারা বলছেন, ‘‘জেলেদের আমরা বুঝিয়েছি, তাঁরা যদি পর পর দু’বছর ছোট ইলিশ না ধরেন, তা হলে নদীতে বড় ইলিশের বান ডাকবে। তাতে আখেরে লাভ হবে তাঁদেরই।’’