লোকই নেই, লাইট জ্বলবে!

সময়ে খোলে সরকারি দফতর? সময়ে ঢোকেন কর্তারা? দূরদূরান্ত থেকে এসে পরিষেবা পান সাধারণ মানুষ? নাকি নাকাল হওয়াই রোজকার রুটিন? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। হন্তদন্ত হয়ে ব্লক অফিসের সামনে পৌঁছে থতমত খেয়ে গেলেন এক যুবক। আশপাশে কাউকে না পেয়ে এই প্রতিবেদককেই জিগ্যেস করলেন — ‘‘আজ অফিস খুলবে না? কাউকে তো দেখছি না!’’ 

Advertisement

মনিরুল শেখ

হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১২
Share:

বেলা তখন সকাল ১০টা ৪০ মিনিট। ফাঁকাই পড়ে চেয়ার। নিজস্ব চিত্র

দু’দিন ছুটির পরে সবে অফিস খুলেছে। সোমবার সকাল-সকাল নানা জায়গা থেকে অনেকেই আসছেন হরিণঘাটা ব্লক অফিসে।

Advertisement

সকাল ১০টা ২০।

হন্তদন্ত হয়ে ব্লক অফিসের সামনে পৌঁছে থতমত খেয়ে গেলেন এক যুবক। আশপাশে কাউকে না পেয়ে এই প্রতিবেদককেই জিগ্যেস করলেন — ‘‘আজ অফিস খুলবে না? কাউকে তো দেখছি না!’’

Advertisement

একটু খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া গেল অফিসের নৈশপ্রহরীকে। তাঁকেই জিগ্যেস করা হল— ‘‘এত বড় অফিসে এখনও কেউ আসেননি?’’ তিনি আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘কী আর করা যাবে!’’

সাড়ে ১০টাও গড়িয়ে গেল। কারও দেখা নেই। লোকজন এসে রক্ষীকেই নানা রকম প্রশ্ন করছেন। ১০টা ৩২ মিনিটে ঘরে ঢুকলেন যুগ্ম বিডিও জয়প্রকাশ মণ্ডল। তার পর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বেরিয়ে বাইরে রোদে এসে দাঁড়ালেন।

পৌনে ১১টা বাজল। তখনও ব্লক অফিসের নীচতলায় তথ্যকেন্দ্র, সংস্থা বিভাগ বা নির্বাচন বিভাগের কোনও কর্মীই আসেননি। তখনও অন্ধকার ঘর। ‘‘অফিসে লোকই নেই, লাইট জ্বলবে!’’ বিজ্ঞ মুখে বললেন এক সাফাইকর্মী। তখনও দেখা নেই বিডিও কৃষ্ণগোপাল ধাড়ার।

বার্ধক্য ভাতা কেন মিলছে না তা জানতে মোল্লাবেলিয়া থেকে এসেছেন দুলাল ঘোষ। তিনি অফিসে ঢুকতেই নৈশপ্রহরী বললেন, ‘‘এখন যাবেন না। কেউ নেই।’’ সাড়ে ১০টা থেকে দুলালবাবু বাইরের চেয়ারেই বসে। পেনশনের সমস্যা নিয়ে ফতেপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে এসেছেন জোৎস্না সিংহ। বেলা ১১টাতেও কেউ এসে পৌঁছলেন না দেখে তেতো গলায় তিনি বললেন, ‘‘সব সাহেবসুবো লোক! আমাদের খবর কে রাখে!’’

সামান্য পরে নির্বাচন ও সংস্থা বিভাগের জনা তিনেক কর্মী এলেন ধীরে-সুস্থে। টেবিলে ব্যাগপত্তর রেখে বেরিয়ে এসে এক জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে নানা দফতরের বদলি সংক্রান্ত আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ব্লকের একেবারে সাধারণ স্তরের কয়েক জন কর্মী নিচুগলায় অনুযোগ করেন, বেশির বাবুই আসেন সাড়ে ১১টা নাগাদ। যাঁরা দৈবাৎ ১১টায় আসেন, আড্ডার ঘোর কাটিয়ে কাজে বসতে তাঁরাও ১২টা বাজিয়ে দেন।

ইতিমধ্যে বেলা ১১টা ২০ বেজে গিয়েছে। একতলার বিভাগগুলিতে কিছু কর্মী এলেও একেবারেই ফাঁকা উপরের ঘরগুলির টেবিল। সেখানে রয়েছে মৎস্য, তফসিলি জাতি ও জনজাতি, ক্ষুদ্র সঞ্চয়, শিক্ষা, ন্যূনতম মজুরি ও সমবায় বিভাগ। কয়েক জন ঘর ছাঁট দিচ্ছিলেন। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘এক বাবু এসেছেন। দেখুন, ব্যাগ রাখা আছে। বাকিরা কখন আসবেন, কে জানে!’’

ততক্ষণে ভিড় বেশ বেড়ে গিয়েছে। অফিসের সামনে অনেক লোক বসে। আর দেখার কিছু ছিল না। ব্লক অফিস ছেড়ে গুটিগুটি বেরিয়ে পড়া গেল।

পরে ফোনে ধরা গেল বিডিও-কে। জানতে চাওয়া হল— সকালে আপনি কোথায় ছিলেন স্যর?

বিডিও বললেন, ‘‘আমার জরুরি কাজ ছিল।’’ সে তো থাকতেই পারে। অফিসে বা অফিসের বাইরে বিডিও-দের নানা মিটিং লেগেই থাকে। অন্য নানা কাজও থাকে। সত্যি বলতে ২৪ ঘণ্টাই তাঁর ‘ডিউটি’। কিন্তু বাকিদের তো সওয়া ১০টার মধ্যে আসার কথা!

বিডিও-র ব্যাখ্যা, ‘‘অনেকেরই নানা কাজ, মিটিং সেরে আসতে হয়। ফলে অফিস ঢুকতে বেলা হয়।’’

ব্লক অফিসের সকলেই কি এ দিন মিটিং করে এলেন?

বিডিও: ‘‘খোঁজ নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন