জিয়াগঞ্জের স্কুলে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁকে বরণ করে নিচ্ছেন ট্রেনের সহযাত্রী স্কুলশিক্ষিকা চন্দ্রাণী হালদার। —নিজস্ব চিত্র।
হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গন্তব্য মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ। ট্রেনে রাজ্যপালের ঠিক পাশের আসনে বসেছিলেন এক স্কুলশিক্ষিকা। সহযাত্রীর সঙ্গে খানিক ক্ষণের আলাপে দুম করে সফরসূচি বদলালেন রাজ্যপাল। চলে গেলেন ওই শিক্ষিকা যে স্কুলে কর্মরত সেখানে। স্কুল পরিদর্শন করে তার উন্নয়ন খাতে ১০ হাজার টাকা সাহায্য করলেন রাজ্যপাল। আরও ২ লক্ষ টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ছেন। স্বাভাবিক ভাবে আপ্লুত স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়া সফর শেষে মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। বাংলাদেশিদের পুশব্যাক সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য এই সফর বলে রাজভবন সূত্রে খবর। সেই সূত্রে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস ধরে বহরমপুরে পৌঁছোন রাজ্যপাল। ওই ট্রেনে তাঁর সহযাত্রী ছিলেন জিয়াগঞ্জ সুরেন্দ্রনারায়ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা চন্দ্রাণী হালদার। ট্রেনের আসন নিয়ে কথাবার্তা সূত্রপাত। খানিক ক্ষণের আলাপচারিতায় শিক্ষিকা জানান, তাঁর কর্মক্ষেত্রের কথা। স্কুলের পরিস্থিতি। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নেন তিনি জিয়াগঞ্জ সুরেন্দ্রনারায়ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে যাবেন। সঙ্গে সঙ্গে সহকর্মীদের খবর পাঠান চন্দ্রাণী। রাজ্যপাল স্কুলে পা দিয়ে দেখেন, ওই অল্প সময়ের মধ্যে বেশ সাজানো হয়েছে ভবন থেকে চত্বর। শিক্ষিকারা রাজ্যপালকে সংবর্ধনা দেন। স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীদের হাতে চকোলেট তুলে দিয়ে তাদের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন রাজ্যপাল। তার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে একটি দশ হাজার টাকা চেক ধরিয়ে দেন বোস।
স্কুলের সহ-শিক্ষিকা চন্দ্রাণী বলেন, ‘‘কলকাতা স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছিলাম আমি। ওঁর সহযাত্রী হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। রাজ্যপালের সহযোগিতায় আমরা সকলে মুগ্ধ।’’ কী ভাবে আলাপ হল রাজ্যপালের সঙ্গে? শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমাকে সবাই একটু সরে বসতে বলছিলেন। উনিই (রাজ্যপাল) বললেন, ‘না, না এটা ওঁরই সিট।’ তার পর কথায় কথায় জানতে পারি, উনি জিয়াগঞ্জেই আসছেন। আমি আন্তরিক ভাবে অনুরোধ করেছিলাম, আমাদের স্কুলে একটি বার ঘুরে যান। স্কুলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে উনি বললেন আজই যাবেন।’’
ওই স্কুল পরিদর্শন করে রাজ্যপাল গিয়েছিলেন জিয়াগঞ্জে সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিংহের ওয়ার্কশপে। সেখানে কিছু ক্ষণ কাটিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আটরশিয়া সীমান্ত চৌকিতে যান। রাজ্যপালকে অভ্যর্থনা জানান বিএসএফের পদস্থ আধিকারিকেরা। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনা করেন তিনি। আলোচনার বিষয়, সীমান্তে নিরাপত্তা এবং পুশব্যাক। এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন বোস। তাঁদের অভাব-অভিযোগ মন দিয়ে শোনেন। তিনি সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট আকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠাবেন বলে খবর।