জিএসটি’র ধাক্কা চাল-ডাল-নুনেও

টান পড়তে পারে জীবনদায়ী ওষুধে

সকাল সাড়ে আটটাতেই বাজারের থলে হাতে কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কে ওষুধের দোকানে হাজির হয়েছিলেন বছর সত্তরের এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৩:১০
Share:

ব্যবসা-বন্‌ধ। পণ্য পরিষেবা করের প্রতিবাদে। নিজস্ব চিত্র

চালু হয়ে গেল জিএসটি। কিন্তু জিইয়ে রইল দ্বিধা, সংশয়, আশঙ্কা।

Advertisement

তার আগে শুক্রবার দিনভর ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আর জোগান নিয়ে মাথা ঘামিয়ে গেল শহর-গ্রাম।

সকাল সাড়ে আটটাতেই বাজারের থলে হাতে কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কে ওষুধের দোকানে হাজির হয়েছিলেন বছর সত্তরের এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। করুণ গলায় বললেন, ‘‘প্রেশার-সুগার হাবিজাবি মিলিয়ে কর্তা-গিন্নি দিনে ১৩ রকমের ওষুধ খাই, জানোই তো। কাল থেকে দাম নাকি বেড়ে যাচ্ছে? সাপ্লাইও কি বন্ধ থাকবে? মাসের শেষ। পেনশন না পাওয়া পর্যন্ত হাতে টাকাকড়ি নেই।’’ দোকানদার বললেন, ‘‘ওষুধ নিয়ে যান। পরে দাম দেবেন। কবে ওষুধ আবার আসবে, আমরাও জানি না।’’

Advertisement

কৃষ্ণনগরে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের মালিক অংশুমান দে বলছেন, ‘‘পুরনো স্টক যা রয়ে গেল সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা পুরনো হার ৪.৭৬ শতাংশের বেশি কর নিতে পারব না। অথচ বিক্রির জন্য তার চেয়ে বেশি কর দিতে হবে। লোকসান হবে।’’ বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)–এর নদিয়া জেলার সম্পাদক গুপীনাথ দে বলেন, ‘’আমাদের কী করতে হবে, খুচরো ব্যবসায়ীরাই বা কী করবেন, কোম্পানিগুলো ওষুধ সাপ্লাই করবে কি না, সবটাই ধোঁয়াশা।’’

মুর্শিদাবাদ জেলা বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসেসিয়েশন-এর অন্যতম কর্তা রূপকুমার জৈনও বলেন, ‘‘যে ওষুধ শতকরা ১২ থেকে ১৪ টাকা কর দিয়ে কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছি, জিএসটি চালু হওয়ার পরে তার জন্য সরকারকে শতকরা ২৮ টাকা হারে কর দিতে হবে। যে ওষুধ ৫ টাকা হারে কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছি, তার জন্য ১২ টাকা কর লাগবে। আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিছু দিন থেকে ওষুধ কেনা বন্ধ করেছেন।’’

ফলে, জোগানে টান পড়তে চলেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘অন্য এক সংগঠনের বড় ব্যবসায়ীরা গোটা জুন মাস জুড়ে কোম্পানির থেকে ওষুধ কেনেনি। ফলে সঙ্কট দেখা দিয়েছে।’’ তাঁর মতে, এর ফলে প্রথমত জীবনদায়ী ওষুধের অভাবে রোগীরা বিপদে পড়বেন। দ্বিতীয়ত, ওষুধ নিয়ে কালোবাজারি হবে।

জঙ্গিপুরের ওষুধ ব্যবসায়ী সংগঠনের অস্থায়ী সম্পাদক নিমাই সিংহরায় বলেন, “দু’দিন আগে একটি বৈঠকে জানা গিয়েছে যে আমাদের ৫, ১২ ও ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হবে বিভিন্ন ওষুধের উপর। কিন্তু সে তালিকা আমরা হাতে পাইনি। তা ছাড়া বেশির ভাগ ব্যবসায়ী এখনও জিএসটির তালিকা ভুক্ত হননি। তাঁদের জিএসটি নম্বরও নেই। তিন সপ্তাহ যাবৎ বেশির ভাগ ওষুধেরই বেচাকেনা বন্ধ রেখেছি।’’

পরিস্থিতি বুঝে কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর, কল্যাণী থেকে পলাশি, বহরমপুর থেকে কান্দি সর্বত্রই জরুরি ওষুধ মজুত করার হিড়িক পড়েছে। বিভিন্ন নার্সিংহোম এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিও প্রচুর ওষুধ মজুত করেছে। তার ফলেও ওষুধের ভাঁড়ারে বাড়তি টান পড়ছে।

শুধু ওষুধ নয়। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীতেও টান পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জিএসটি-র হিসেব বলছে, চাল ডাল আটা ময়দা গম সস্তা হবে। তাতে জনতার স্বস্তি পাওয়ারই কথা। কিন্তু সেখানেও শঙ্কার সিঁদুরে মেঘ। রানাঘাটের ব্যবসায়ী রমেন সরকার বলেন, ‘‘নির্মাতা সংস্থাগুলি তো বটেই, সাপ্লায়াররাও জানিয়ে দিয়েছে, তারা জিএসটি-র জন্য প্রস্তুত নয়। পুরো বিষয়টা তাদের কাছে পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত মাল সাপ্লাই হবে না। অন্তত এক সপ্তাহ তো বটেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন