ফাইল চিত্র
পদ্মা আছে। পদ্মায় জল আছে। মৎস্যজীবীরা? হ্যাঁ, তাঁরাও আছেন। আছে পিউলি, পাঙ্গাস, বাঁশপাতা। নেই শুধু ইলিশ! জামাইষষ্ঠীতে বাবাজীবনের পাতে ইলিশ দিতে না পেরে বেজার হয়েছেন শাশুড়ি। কাঁচুমাচু মুখে শ্বশুরমশাইও বলেছেন, ‘‘খুব চেষ্টা করলাম বাবা। কিন্তু তামামা এলাকা ঢুঁড়ে কোথাও ইলিশ পেলাম না।’’ তার পরে একটু থেমে শুরু করেছেন পুরনো গপ্প, ‘‘বুঝলে, সে এক সময় ছিল। তখন রোজই পাতে পড়ত ইলিশ। মাঝেমধ্যে তোমার মা-ও বেশ রেগে গিয়ে বলতেন, ‘আবার ইলিশ! বলি, আনাজপাতি কি সব বানের জলে ভেসে গিয়েছে!’ তখন আনাজ বিক্রেতাদেরও অনেক সময় অনুরোধ করে ইলিশের বদলে চেয়ে নেওয়া হত কচি লাউ কিংবা কুমড়ো।’’
বছর কুড়ি-বাইশ আগেও পদ্মা ঘেঁষা রাজাপুর, রানিনগর, সাগরপাড়া, জলঙ্গিতে ইলিশের এমনই রমরমা ছিল। আষাঢ়ের শুরু থেকেই মৎস্যজীবীদের জালে উঠে আসত পদ্মার রুপোলি শস্য। এখন আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ চলে এসেছে। পদ্মায় জলও বাড়ছে। কিন্তু ইলিশ নেই। অতএব, দুপুরের পাতে কাপ্তানি করছে চালানি রুই-কাতলা কিংবা পদ্মার পিউলি, বাঁশপাতা।
রানিনগরের মনোজ দাস বলছেন, ‘‘এখন একটু বেলার দিকে মাছের বাজারে গিয়ে ইলিশ তো বহু দূরের কথা, পদ্মার ছোট মাছও সবসময় মিলছে না।’’ শেখপাড়ার দীর্ঘ দিনের মৎস্য ব্যবসায়ী নৃপেন হালদার জানাচ্ছেন, পদ্মায় এখনও ইলিশ উঠতে শুরু করেনি। ছোট যা মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা বাজারে আসতে না আসতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে।’’
সীমান্তের বাজারে যে ইলিশ মিলছে তা অবশ্য পদ্মার নয়। সেগুলো আসছে ডায়মন্ড হারবার থেকে। পদ্মাপাড়ের লোকজন অবশ্য বলছেন, ‘‘এই ইলিশের সঙ্গে পদ্মার ইলিশের কোনও তুলনাই হয় না। তার উপরে এই ইলিশের দাম প্রতি কিলোগ্রাম চারশো থেকে সাড়ে চারশো টাকা। এত দাম!’’ পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা সুমন সাহা বলছেন, ‘‘পদ্মার ইলিশের দামও এখন কিছু কম যায় না। মাঝেমধ্যে জলঙ্গি এলাকায় ইলিশ ওঠে। তবে তার দামও আকাশছোঁয়া।’’
কান্দির জেমো এন এম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা ‘ফিসারমেন অফ দ্য কোস্টাল ডিস্ট্রিক্ট অফ বেঙ্গল’ গ্রন্থের লেখক সূর্যেন্দু দে। তিনি জানান, প্রজননের ক্ষেত্রে নানাবিধ বাধার কারণে ইলিশ মাছ কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া পদ্মার উপর লাগামছাড়া অত্যাচারের কারণে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছও কমে যাচ্ছে। ইলিশের প্রজননের শর্তগুলো অবহেলা করা হচ্ছে। প্রজনন ক্ষেত্রই তো হারিয়ে যাচ্ছে। মাছ ধরার সময়সীমা কেউ মানে না। এখন ইলিশ নিয়ে শুধু উৎসবই হয়, রুপোলি শস্যের কথা কেউ ভাবে না।