পুজো আসছে। হাল ফিরেছে রাস্তার। কলি করা হয়েছে ফুটপাতে। কোথাও অ্যাপ, কোথাও বিশেষ কন্ট্রোল রুম, দুর্ঘটনা ঠেকাতে বেপরোয়া যানবাহনের উপর বাড়তি নজরদারি। পুলিশের কর্মতৎপরতার কমতি নেই।
কিন্তু কাজের কাজ কতটা হচ্ছে? পুজোর মুখে এই তো প্রশ্ন উঠছেই। কারণ, এত কিছুর পরে দুর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে কই?
শনিবার, তৃতীয়ায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ছ’জনের। জখম আরও কয়েক জন। দুই জেলাতেই দুর্ঘটনায় লছিমন বা মোটর ভ্যান যোগ রয়েছে। নদিয়ায় লরির মুখোমুখি এসে পড়ায় লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে লছিমনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের। লছিমন নিয়ে হাজারো বিতর্ক হলেও তা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যে ব্যর্থ তা বারবার প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।
এ দিন সকালে প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে নদিয়ার ধুবুলিয়ায়। মৃত্যু হয় দু’জনের। মৃতরা হল ধুবুলিয়ার ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা শঙ্কর মল্লিক (৩২) ও কাঁঠালবেড়িয়ার বিশু দাস (৩৫)। ঘটনাটি ঘটে চৌগাছা মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে কৃষ্ণনগর থেকে একটি কার্ডবোর্ড বোঝাই লছিমন যাচ্ছিল ধুবুলিয়ার দিকে। সামনে যাচ্ছিল দেবগ্রাম গামী একটি বেসরকারি। লছিমনটি পাশ কাটিয়ে বাসটিকে টপকাতে গেলে বোঝাই করা কার্ডবোর্ড বাসের গা ছুঁয়ে যায়। সেই ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি লছিমন চালক। লঠিমনটি ডান দিকে ঘুরে যায়। সেই সময় পিছন দিক দিয়ে একটি লরি আসছিল।
আচমকা লছিমনটি তার সামনে এসে পড়ে। লরির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে কার্ডবোর্ড বোঝাই লছিমনটি। ছুটে আসেন পথ চলতি মানুষ। তাঁরাই প্রথম উদ্ধার কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে চলে আসে ধুবুলিয়া থানার পুলিশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়। পুলিশ মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পুলিশ লরিটিকে আটক করলেও চালক পলাতক।
শুক্রবার রাতে জলঙ্গি থানার সাহেবরামপুর এলাকায় লছিমনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক মহিলার। তাঁর নাম আসুরা বিবি (৪৭)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাত ৮টা নাগাদ জলঙ্গির দিক থেকে করিমপুর-বহরমপুর রাজ্য সড়ক ধরে লছিমনটি সাদিখাঁরদিয়াড় এলাকায় আসছিল। লছিমনটির কোনও বাতি ছিল না। সেই সময় সাহেবরামপুর গ্রামে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ওই মহিলাকে ধাক্কা মারে লছিমনটি। লছিমনটি রাস্তায় ফেলে পালায় চালক।
ঘটনার পর জখম মহিলাকে সাদিখাঁড়দেয়াড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, চালকের পরিচয় জানা গিয়েছে। তাকে শিগগির গ্রেফতার করা হচ্ছে।
করিমপুরে ম্যাটাডোরের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। তাঁর নাম অমর মণ্ডল (৬০)। বাড়ি করিমপুরের মহিষবাথানে। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালে মহিষবাথান বাজারে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুত গতির একটি মাছ বোঝাই ম্যাটাডোর তাঁকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। চালক সহ ঘাতক গাড়িটি পলাতক।
এদিনই নবদ্বীপের মুকুন্দপুরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে শিবু দেবনাথ (৩০) নামে এক সাইকেল আরোহীর। শিবুর বাড়ি বর্ধমানের নাদনঘাট থানার দক্ষিণ শ্রীরামপুর গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে পেশায় হকার শিবু শুক্রবার রাতে সাইকেল চালিয়ে মুকুন্দপুর রাজ্য সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দ্রুত গতিতে আসা ওই পিকআপ ভ্যানটি তাঁকে ধাক্কা মারে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। মুর্শিদাবাদের কান্দিতেও পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের।