গভর্নমেন্ট কলেজ মাঠ। নিজস্ব চিত্র
কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠেই তৈরি হচ্ছে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ জানুয়ারি কলেজের মাঠ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী তার শিলান্যাস করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তও বলেন, “ঠিক হয়েছে, কলেজের মাঠেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হবে। তার জন্য লিখিত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।”
বেশ কিছু দিন আগেই কৃষ্ণনগরে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে এসে কলেজ মাঠের জমিও দেখে গিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে দিনই তিনি জানিয়ে গিয়েছিলেন, কলেজের জমি তাঁর পছন্দ হয়েছে। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা ছিল এত দিন। এ বার সেই সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নীত করার দাবি দীর্ঘদিনের। শহরের সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ এই দাবি করে আসছিলেন। গত ২১ ডিসেম্বর পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলেজের গাবতলা মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির সম্ভাবনার কথা বলার পরে তাই বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি উঠতে শুরু করেছিল। কলেজের প্রাক্তনীদের পাশাপাশি সিপিএম নেতারাও তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, এমন কিছু করা যাবে না যাতে জমির অভাবে কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কলেজের মূল খেলার মাঠ কোনও ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না বলেও তাঁরা দাবি করেছিলেন।
আপত্তির পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রচারও হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার প্রশ্নে শহরের মানুষ সেই বিরোধিতায় বিশেষ শামিল হননি। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অরূপ সরকার বলছেন, “আমরাও চাই, কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নীত হোক। তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করব কেন? কলেজটা হলে শুধু যে আমাদের মেয়েরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে তা-ই নয়, একটা বড় অংশের মানুষের নানা ধরনের জীবিকার ব্যবস্থাও হবে।”
এই বিষয়ে তাঁদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে বৈঠকেও বসেছিলেন কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়ারা। সেই বৈঠকে বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং দাবি ওঠে, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা না করে বরং একই সঙ্গে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবি তোলা হোক। প্রাক্তন পড়ুয়াদের সংগঠন কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ অ্যালুমনাই অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক খগেন্দ্রকুমার দত্তের আশঙ্কা, “কলেজের জমিতে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলে ভবিষ্যতে এই কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। কারণ দেখা দেবে জমির সমস্যা।” তবে তার পরেও তিনি বলেন, “বিরোধিতার জায়গায় যাচ্ছি না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, যাতে কলেজটাকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নীত করা হয়।”
বাধা দেওয়ার পথে হাঁটছে না সিপিএমও। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদি বলছেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে কলেজের মূল খেলার মাঠ দখল করে কিছু করা যাবে না। সেটা হচ্ছে না। তাই বিরোধিতাও করছি না।” তার পরেই তিনি যোগ করেন, “কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবি থেকে সরছি না।”
তবে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে উল্লসিত তৃণমূল। তাদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে এতে বড় ‘মাইলেজ’ পাবে তারা। দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, “কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে শহরের মানুষ উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা বিরোধিতা করছিলেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে সেটা করলে মানুষ তাঁদের ছুড়ে ফলে দেবে।”