বিরোধী নেই, গ্রাম শান্ত

এই ট্র্যাডিশন এই প্রথম নয়। বিনা ভোটেই দুই  পঞ্চায়েতই গত চার দশক ধরে  কখনও শাসন করেছে সিপিএম, কখনও কংগ্রেস।

Advertisement

বিমান হাজরা

গিরিয়া শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৪১
Share:

নিজস্ব চিত্র

গত চার দশকে দশ আসনের গিরিয়ায় পঞ্চায়েত ভোট হয় নি কখনও। সেকেন্দ্রায় অর্ধেক আসনে ভোট হলেও এবার সেটাও ছিল না। দুই পঞ্চায়েতের ২৭টি আসনই এবারে শাসক তৃণমূলের কব্জায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

Advertisement

অবশ্য এই ট্র্যাডিশন এই প্রথম নয়। বিনা ভোটেই দুই পঞ্চায়েতই গত চার দশক ধরে কখনও শাসন করেছে সিপিএম, কখনও কংগ্রেস। দখলের ভোটে এবারে তা তৃণমূলের। যে যখন রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তখনই তার দখলে থেকেছে এই দুই এলাকা। কার্যত শাসক দলের মুক্তাঞ্চল হিসেবে ভোট ব্যাঙ্ক বাড়িয়েছে এই দুই পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ গ্রাম।

বাম জমানার তিন দশক দুই পঞ্চায়েতই ছিল সিপিএমের দখলে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে লাল দুর্গ হিসেবে গড়ে উঠেছিল এই এলাকা। ভাবা গিয়েছিল সে দুর্গ বুঝি ভাঙার নয়। সেই দুর্গেই কংগ্রেস নেতারা ছিলেন “ অনুপ্রবেশকারী।”

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০০৯তে তার দখল নেয় কংগ্রেস। জঙ্গিপুরের সাংসদ তখন প্রণব মুখোপাধ্যায় । একই কায়দায় তাই এলাকার দখল নিতে কোনো অসুবিধে হয় নি কংগ্রেসের । সেই দখলের সুত্রেই ২০০৯ থেকে ২০১৪ কি লোকসভা , কি বিধানসভা, কি পঞ্চায়েত সব নির্বাচনে কংগ্রেসই রাজ করেছে সেখানে। কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে বড় সংখ্যায় ‘রিজার্ভ ’ভোট জুগিয়েছে এই দুই অঞ্চল, এক সময় যা ছিল বামেদের বল ভরসা। সিপিএম গ্রামে তখন ছিল অবাঞ্ছিত। বছর দুই থেকে এই মুক্তাঞ্চল এখন তৃণমূলের কব্জায়।

বাম ও কংগ্রেস জমানায় বোমা , গুলির লড়াইতে একসময় কাঁপত এলাকা। কখনও গ্রামের কোনো বাড়ির মধ্যে উঠোন থেকে , কখনও আম বা বাঁশ বাগানের মাটি খুঁড়ে শয়ে শয়ে তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ । শতাধিক মামলা রুজু হয়েছে।জেল খেটেছেন কয়েকশো মানুষ । গরু পাচারের এক সময়ের মুক্তাঞ্চল ছিল এই এলাকার বড় অংশ। এখন সে পাচারে লাগাম পড়েছে।

গ্রাম ঢুকতেই এক কালী মন্দির। মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রবীণ এক মহিলা বলছেন,“ ভোট কখনও দিয়েছি , কখনওবা বুথ থেকেই ফিরে এসেছি। ভোট এলেই বোমা নিয়ে ছুটোছুটি। সে এক আতঙ্কের দিন। এখন বেশিরভাগই বাইরে কাজে গিয়েছে। অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে । তাই কিছুটা ভাল আছি । বোমার আতঙ্কটা কমেছে।”

এক শিক্ষকের কথা, “এখন গ্রাম অনেক শান্ত। বিরোধিতা নেই। তাই হয়ত এই শান্তি। তবে ভোটে কি হবে বলা মুস্কিল । কারণ ২০১২ সালের লোকসভা উপনির্বাচনে এই দুই অঞ্চল থেকে কংগ্রেস ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। রাজ্যে ক্ষমতার শরিক ছিল তারা। এখন তৃণমূলের দখলে এলাকা। এবারেই প্রথম পরীক্ষা তাদের। ”সিপিএম ও কংগ্রেসের অবশ্য দাবি, ভোটের দিন বুথে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা দুষ্কৃতীরা ঘিরে রাখবে। মানুষ যাতে বুথে যেতে না পারে সেই চেষ্টা হবে। আশপাশে দু চারটি বোমা ফেলে সন্ত্রস্ত করে তুলবে ভোটারদের। রাজ্য পুলিশ কি এটা আটকাবে ? আশঙ্কা তো তাই থেকেই যায়। রঘুনাথগঞ্জ থানার আই সি সৈকত রায় অবশ্য বলছেন, “ ওই এলাকার সমস্ত বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। সেই মত কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল চলবে এলাকায় ভোট পর্যন্ত। এলাকার সবার কাছে আমার ও থানার ফোন নন্বর রয়েছে। কেউ কোথাও শাসালে , বাধা দিলে ততক্ষণাত ফোন করুন। দেখুন পুলিশ ব্যবস্থা নেয় কিনা।” তার অভয়, এলাকার কোনো রাস্তা কেউ কোথাও ঘিরে রাখলে ফোন করুন । দেখুন কি ব্যবস্থা হয়। মানুষের আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিলাম আমি। বিরোধীরা বলছেন, ‘‘ফলেন পরিচয়তে।’’ অপেক্ষা ২৩ এপ্রিলের। সেদিনই ভোট জঙ্গিপুরের, ফলে সন্ত্রস্ত গিরিয়াও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন