বাড়িতে প্রসবেই মৃত্যু-মিছিল

কিশোরীবেলায় পা রাখার আগেই তাদের কপালে সিঁদূর-টিকলি, বছর ঘোরার আগেই অন্তঃসত্ত্বা আর প্রসবের মুহূর্তে আসছে মৃত্যু— জেলার সেই সব প্রান্তিক এলাকায় পা রাখল আনন্দবাজার।কিশোরীবেলায় পা রাখার আগেই তাদের কপালে সিঁদূর-টিকলি, বছর ঘোরার আগেই অন্তঃসত্ত্বা আর প্রসবের মুহূর্তে আসছে মৃত্যু— জেলার সেই সব প্রান্তিক এলাকায় পা রাখল আনন্দবাজার

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০০:০৬
Share:

প্রসূতিদের এই মৃত্যু মিছিলের মূল কারণ বাড়িতে প্রসব, চলতি নাম ‘হোম ডেলিভারি’।

Advertisement

ক্রমান্বয়ে সে ঘটনা সামনে আসতে থাকায় নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলায় পিছিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি ব্লকে ডেলিভারি পয়েন্ট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সাগরদিঘির প্রত্যন্ত এলাকা গৌরীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিও সেই তালিকায় রয়েছে।

ডেলিভারি পয়েন্ট গড়তে তড়িঘড়ি তৈরি করা হয়েছে মাতৃসদন। ঝকঝকে বাড়ি, নীল-সাদা রং, ফ্লুরোসেন্ট আলো, দশ-দশখানা শয্যা, চিকিৎসা সামগ্রী— বাদ নেই কিছুই। কিন্তু সেই মাতৃসদনের তালা খোলেনি।

Advertisement

সাড়ে তিন বছর ধরে সে বাড়ির চারপাশে এখন ধীরে ধীরে আগাছার জঙ্গল মাথা চাড়া দিচ্ছে। সেই মাতৃসদনে বুক বেঁধে থাকা আশপাশের কাবিলপুর, গোবর্ধনডাঙা, পাটকেলডাঙা, বালিয়া, বারালা— পাঁচ পঞ্চায়েতের গ্রামের মানুষকে তাই এখনও ছুটতে হচ্ছে বিশ বাইশ কিলোমিটার দূরের সাগরদিঘি হাসপাতালে।

সাগরদিঘির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এএম সামিম বলছেন, ‘‘ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০টি নিশ্চয় যান। চলছে মাত্র ৭টি। পঞ্চায়েতে ১৩টি গ্রাম ধরলেও প্রায় দেড়শো গ্রামের জন্য ৭টি নিশ্চয় যান। ফলে সব প্রসূতির কাছে বিনামূল্যে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে কই!’’

২০১৭ সালে সাগরদিঘি ব্লকে হোম ডেলিভারির সংখ্যা ছিল ৪৫৫। গত বছর তা নেমে এসেছে প্রায় ১৫০’এ। এটা শূন্যতে নামিয়ে আনা সম্ভব, যদি গৌরীপুরের ডেলিভারি পয়েন্টটি দ্রুত চালু করা যায়। কিন্তু সেই ডেলিভারি পয়েন্টও এখন বিশ বাঁও জলে।

সামিম বলছেন, ‘‘কি বলব বলুন, এলাকার কোনও গ্রামের প্রসূতির বাড়ি থেকে ফোন এলে সেখানে নিশ্চয় যান পৌঁছনোর আগে বাড়িতেই প্রসব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে অবিরাম। গত মাসে কাবিলপুরেই ঘটেছে ৮টি হোম ডেলিভারির ঘটনা। এ মাসে ৩টি।’’

একই ছবি শমসেরগঞ্জের উত্তর মহম্মদপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানেও মাতৃ সদন সেজেগুজে তৈরি কিন্তু তালা খোলেনি। শমসেরগঞ্জ ব্লকে ২০১৫ সালে হোম ডেলিভারির সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬০০। গত বছর সেটা কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করা গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু শূন্য করা যায়নি।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক গোলাম হোসেন বলছেন, “উত্তর মহম্মদপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ডেলিভারি পয়েন্ট করতে সাজানো গোছানো হয়েছে। কিন্তু চালু করা যায়নি।

তবে সে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হলেও তাতে হোম ডেলিভারি বন্ধ হবে না। আগে দরকার পুটিমারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করার। কারণ ফিডার ক্যানালের পূর্বপাড়ের দুটি পঞ্চায়েত ভাসাই পাইকর ও দোগাছি হোম ডেলিভারির মাথা ব্যথার কারণ।” ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন