এনটিপিসির ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনে প্রভাব পড়ে এমন কোনও আন্দোলন করা হবে না বলে আশ্বস্থ করল ডান-বাম শ্রমিক সংগঠনগুলিও।
সোমবার জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসকের সঙ্গে এক বৈঠকে সিটু, আইএনটিটিইউসি, আইএনটিইউসি ও ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের নেতারা এই মর্মে আশ্বাস দেন। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অফিসে ডাকা বৈঠকে ছিলেন এনটিপিসির কর্তা, রাজ্য শ্রম দফতরের আধিকারিকেরাও। প্রায় দু’ঘণ্টার ওই বৈঠকে ডাকা হয়নি সদ্য গড়ে ওঠা শ্রমিকদের ‘সংগ্রাম কমিটি’কে। অথচ ওই কমিটির আন্দোলনের জোরেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বের দাবি, ৯০ ভাগ ঠিকা শ্রমিক তাদেরই সঙ্গে রয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক নতুন কমিটিকে গুরুত্ব দেননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শ্রমিকেরা কার দিকে তা ভবিষ্যত বলবে।’’ সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খানও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্যে সংগ্রাম কমিটির প্রভাব মানতে চাননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এ ভাবে গা-জোয়ারি করে অচলাবস্থা তৈরির ফরাক্কায় আগে কখনও হয়নি। যাঁরা এ সব করেছেন হুজুগে করেছেন।’’ এ ভাবে শ্রমিক-স্বার্থ সুরক্ষিত হতে পারে না বলেও তাঁর মত। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা সোমেন পাণ্ডে তাঁদের সঙ্গে সহমত। তিনি মনে করেন, ‘‘শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে এটা করা হয়েছে।’’
গত রবিবার সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক অমর চক্রবর্তী সাংবাদিক বৈঠক করে বিদ্যুৎ পরিষেবার ব্যাঘাত ঘটিয়ে অচলাবস্থার তৈরির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ‘এখন থেকে সব সমস্যা মেটানো হবে আলোচনার মাধ্যমে। ধর্মঘট বা কর্মবিরতি করে নয়।’ সেই প্রতিশ্রুতির চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ডান-বাম সব শ্রমিক সংগঠনগুলির এমন বোধোদয়ে স্বস্তিতে ফরাক্কা কর্তৃপক্ষ।
সংগ্রাম কমিটির নেতারা অবশ্য শ্রমিক সংগঠনগুলির তোপকে ধর্তব্যের মধ্যে আনতে চাইছেন না। তাঁরা বলছেন, ‘‘ঠিকা শ্রমিকদের উপরে ওই ৪টি সংগঠনের কোনও প্রভাব নেই। তাই ওদের সঙ্গে শ্রমিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে ফল হবে না।’’ একধাপ এগিয়ে তাঁরা বলছেন, ঠিকাকর্মীর মৃত্যুকে ঘিরে আন্দোলনে সাফল্য আসতেই অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে ওই সংগঠনগুলি। তাই সকলে মিলে তাঁদের আন্দোলনকে কলুষিত করতে নেমেছেন!
জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা অবশ্য এ দিন শ্রমিক নেতাদের স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন কোনও অবস্থাতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত করা যাবে না। তেমনটা হলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
গ্রেফতার পাঁচ। দিন কয়েক আগে চালক-খালাসিকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে জাতীয় সড়ক থেকে ভোজ্য তেল বোঝাই একটি ট্যাঙ্কার লুঠ করার অভিযোগে পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ট্যাঙ্কারটি। চুরি যাওয়া ভোজ্য তেলের ৯০ শতাংশই উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন। ধৃতদের নাম সইদুল ইসলাম ওরফে কালো, সেলিম সশখ, আব্দুল কালাম শেখ, রবিউল ইসলাম এবং পল্টু দাস। প্রথম তিন জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা। রবিউলের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভবানীপুরে। পল্টু বজবজের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ জুন রাতে হলদিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার উৎপাদিত প্রায় ১২ হাজার লিটার ভোজ্য তেল নিয়ে ট্যাঙ্কারটি রানিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। মুম্বই রোড ধরে রাত ১২টা নাগাদ ট্যাঙ্কারটি রূপনারায়ণ নদের সেতু পার হয়ে আসে নাউপালায়। তখনই একটি ছোট গাড়ি ট্যাঙ্কারটির পথ আটকে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে আসে পাঁচ দুষ্কৃতী। চালকের কেবিনে উঠে পড়ে তারা। চালকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁর এবং খালাসির হাত-পা বেঁধে ফেলে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, রাতেই ট্যাঙ্কার চালিয়ে দুষ্কৃতীরা চলে যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে। সেখানে একটি গোপন আস্তানায় ট্যাঙ্কার থেকে তেল নামিয়ে নেওয়া হয়। পরের দিন ভোরে ট্যাঙ্কারটিকে চালিয়ে এনে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে ফেলে রেখে তারা পালায়। গোঙানি শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে সকালে চালক এবং খালাসিকে উদ্ধার করে।