রানাঘাট এসিজেএম

বিষের শিশি হাতে কাঠগড়ায় উঠে চিৎকার, ‘বিচার পাইনি’

বৃহস্পতিবারের বারবেলা। রানাঘাট আদালতের এসিজেএম এজলাসে সবে একটি মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। ডাক পড়েছে এক মহিলা সাক্ষীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২৪
Share:

বৃহস্পতিবারের বারবেলা।

Advertisement

রানাঘাট আদালতের এসিজেএম এজলাসে সবে একটি মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। ডাক পড়েছে এক মহিলা সাক্ষীর। আইনজীবীরা শেষ বার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন ফাইলে। মামলার নথি খুঁটিয়ে দেখছেন বিচারকও।

আচমকা তীব্র চিৎকার।

Advertisement

মাঝবয়সী একটি লোক তিরবেগে ছুটে গিয়ে উঠে পড়েছে সাক্ষীর কাঠগড়ায়। হাতে ধরা একটা শিশি। বারবার সেটা দেখিয়ে চিৎকার করে কিছু চলেছে লোকটি।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক সকলেই— এমনকী, অভিযুক্তদের লকাপের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীরাও। বিচারক সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার অপ্রস্তুত। তাঁর আসন থেকে মোটে ফুট তিনেক দূরে সাক্ষীর কাঠগড়ায় চলছে এই কাণ্ড!

‘‘আমি বিষ খেয়েছি— আমি বিষ খেয়েছি ম্যাডাম’’— পরিত্রাহী চেঁচিয়ে চলেছেন হাঁসখালির সুনীল রায়। ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই সাক্ষীর কাঠগড়ার দিকে ছুটলেন জনা দুয়েক আইনজীবী। তাঁরা ভেবেছিলেন, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির হাতে অ্যাসিডের শিশি রয়েছে। ঝপাৎ করে তাঁকে ধরে পাঁজাকোলা করে দু’জনে নামিয়ে আনলেন কাঠগড়া থেকে।

শিশিটা ছিটকে পড়ল কাঠগড়ায়। তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল এজলাসে। ততক্ষণে পুলিশকর্মীরা ছুটে এসে সুনীলকে এজলাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর তিনি চেঁচিয়ে চলেছেন— ‘‘আমি বিচার পাইনি। তাই বিষ খেয়েছি।’’ শিশির ঝাঁঝালো গন্ধ তাঁর মুখেও। পুলিশ এবং আদালতের কর্মীরা তাঁকে বারান্দা দিয়ে একতলায় নামাচ্ছেন, সুনীল তখনও চিৎকার করে বলছেন, ‘‘বিচার পাইনি হুজুর, বিচার পাইনি।’’ তাঁকে আদালত থেকেই রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, রাত পর্যন্ত সঙ্কট কাটেনি।

হাঁসখালির গারাপোতা বেলতলার সুনীল এ দিন আদালতে এসেছিলেন স্ত্রী দীপুরানিকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর সঙ্গে যে বিষের শিশি রয়েছে, তা জানতেন না স্ত্রীও। তিনি আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কখন বিষ খেয়েছেন, তাও জানতে পারেননি।

কিন্তু কেন বিষ খেলেন সুনীল?

পরিবার সূত্রের খবর, ১২ বছর দুবাইয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে বছর চারেক আগে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন সুনীল। জমি-জায়গা কিনে গুছিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পরপর তিনটি মামলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তিন বছর আগের সেই ঘটনায় ভাইয়ের সঙ্গে পুলিশ তাঁকেও গ্রেফতার করে। তিন মাস জেল খেটে জামিন পান।

দীপুরানি জানান, সেই ঘটনা মিটতে না মিটতে গ্রামের এক জন তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু অভিযুক্তকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ সুনীলকে গ্রেফতার করে। তাঁর কেনা একটি জমিও জোর করে দখল করার চেষ্টা চলছে। এই বিষয়টিও আদালতে গড়িয়েছে। স্ত্রীর দাবি, এই সব নিয়েই জর্জরিত ছিলেন সুনীল।

সুনীলের আইনজীবী মিহির বিশ্বাস জানান, এ দিন তাঁর কোনও মামলারই শুনানি ছিল না। মাস তিন পরে তাঁর একটি মামলার শুনানি রয়েছে। সুনীল যে আদৌ আদালতে এসেছেন, তাও জানতেন না তিনি। দীপুরানি জানান, সকালে তাঁর স্বামী বলেন, সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাই তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে আদালতে আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘ও যে এমন কাণ্ড ঘটাবে, ঘুণাক্ষরেও বুঝিনি। তা হলে কিছুতেই আসতে দিতাম না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement