বিজেপি বড় জুজু। তাই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতি সভা করতে কৃষ্ণনগরে এসে জেলা নেতাদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা দলের তরফে নদিয়ার দায়িত্বে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য নেতৃত্ব যে ক্ষমতার রাশ টানছে, তা-ও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশ কিছু এলাকায় বিজেপির নজরকাড়া ফল হওয়ার পরেই জেলার কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীকে ডেকে ধমকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এ বার পার্থ অনুযোগ করলেন, তাঁর বাছাই অমান্য করে কোনও-কোনও বিধায়ক নিজের পছন্দের প্রার্থীকে প্রতীক দিয়েছিলেন। তার ফল ভুগতে হয়েছে। তাই বোর্ড গঠনের পর্বে রাজ্যই যা করার করবে।
পার্থ বলেন, “আমি যাঁদের প্রতীক দিতে চেয়েছিলাম, কিছু বিধায়ক তাঁদের অনেকের কাছে প্রতীক পৌঁছে দেননি। নিজেদের লোককে দিয়েছেন। ওঁরা ভেবেছিলেন, কাঠি দাঁড় করিয়ে দিলেও জিতে যাবে!” তার মানে কি কেউ-কেউ রাজ্য নেতৃত্বকে অস্বীকার করছেন? পার্থবাবু বলেন, “কোথাও কোথাও তো অস্বীকার করতে দেখাই গিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তার পরেই তাঁর নির্দেশ, ‘‘এ বার আর কোনও কমিটি করবেন না। কাউকে কথা দেবেন না। যা করার রাজ্য নেতৃত্বই করবে।”
জেলার নানা অংশে গোষ্ঠীবাজি যে খাল কেটে বিজেপি নামে কুমিরকে ডেকে এনেছে, তা বস্তুত তৃণমূলের অনেক নেতাই মানছেন। এ দিন কথার শুরুতে পার্থ বলেন, “বিজেপি এই জেলায় একটু চঞ্চলতা শুরু করেছে। আমাদের এটার মোকাবিলা করতে হবে।” ঘটনাচক্রে, সন্ধ্যায় রানাঘাট ফ্রেন্ডস ক্লাব ময়দানে সভা করতে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঙ্কার দেন, ‘‘এত দিন যাঁরা বিজয় উৎসব করেছেন, মাংস-ভাত খেয়েছেন, গামলা-গামলা রসগোল্লা খেয়েছেন, তাঁদের এ বার করলার রস খাওয়াব।’’
গত পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের ৩৪ শতাংশ আসনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী ছিল না। তাণ্ডব চালিয়ে বিরোধীদের মনোনয়নই দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। দিলীপ বলেন, ‘‘আমার আশা, ওই সব আসনে ফের ভোট হবে। আমরা ২০ হাজার আসনেই লড়ব।’’ সিপিএম ও তৃণমূলের কিছু লোকজন এ দিন তাঁর হাত থেকে পতাকা নিয়ে বিজেপিতে যোগও দিয়েছেন।
অতএব তৃণমূল ভবন কেন জেলা নেতাদের উপরে পুরো ভরসা রাখতে পারছে না, তার কারণ অনেকটাই স্পষ্ট। পার্থ আক্ষেপ করেন, ‘‘আমরা মিছিল ভুলেছি। বক্তৃতা ভুলেছি।’’ সতর্ক করেন, ‘‘যদি জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক উন্নতি রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে হয়, তবে তার স্থায়ীত্ব বেশি দিন হয় না। এটা রায়বাবু করতেন। আমরা এটা করতে দেব না।”