ভরা বর্ষায় পদ্মা-বাঁকে পাক খায় হাহাকার

কাছারিপাড়া পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা শঙ্কর মণ্ডল বলছেন, ‘‘পদ্মার মূল স্রোত যখন থেকে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বইতে শুরু করেছে সে দিন থেকে এই কাটা পদ্মায় ইলিশও মুখ ফিরিয়েছে। যেটুকু ছিল সে পথ তো মানুষ নিজে বন্ধ করে দিয়েছে।’’

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০১:২৬
Share:

উপবাস-ক্লান্ত শরীরে মহম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি ফিরছেন। পারিষদদের নিষেধ সত্ত্বেও তিনি ইলিশ মাছ খেয়েছিলেন। নিষেধ কেন? কারণ, দিল্লির লোকজন তখনও এই মাছ চিনতেন না। গুরুভোজন সহ্য হয়নি। সেই কারণেই কি না কে জানে, কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যান বিন তুঘলক। সৈয়দ মুজতবা আলির এই লেখা অনেকেরই হয়তো মনে আছে। এর পর মুজতবা আলির মন্তব্য, ‘‘ইলিশ খেয়ে যখন সম্রাটের মৃত্যু হয়েছে, তখন নিশ্চিত তিনি বেহস্তে গেছেন।’’

Advertisement

এহেন ইলিশ ভুলে বসেছে বঙ্গদেশের ঠিকানা। আষাঢ় ফুরিয়ে শ্রাবণ এসে গেল! হোগলবেড়িয়ার মৎস্যজীবী বিদ্বান হালদারের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের এ দিকে পদ্মায় ইলিশ পাওয়া লটারি জেতার মতো ব্যাপার!’’

অথচ বছর দশেক আগেও শুধুমাত্র ইলিশ ধরার জন্যই বর্ষার রাতে কাটা পদ্মায় ভেসে পড়তেন শান্তিময় জোয়ারদার, কার্তিক মণ্ডলেরা। সে সব গল্প ভেসে ওঠে ঝিম ধরা বর্ষার বিকেলে। কিন্তু বর্ষা এমন ইলিশহীন হয়ে উঠল কেন?

Advertisement

কাছারিপাড়া পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা শঙ্কর মণ্ডল বলছেন, ‘‘পদ্মার মূল স্রোত যখন থেকে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বইতে শুরু করেছে সে দিন থেকে এই কাটা পদ্মায় ইলিশও মুখ ফিরিয়েছে। যেটুকু ছিল সে পথ তো মানুষ নিজে বন্ধ করে দিয়েছে।’’

হাহাকার একই রকম গঙ্গাবক্ষেও!

সমুদ্র উজিয়ে গঙ্গা-মোহনার কাছাকাছি এসেই ঠিকানা বদলে ইলিশ পাড়ি দিচ্ছে পদ্মা-গাঙে। কখনও বা আরও দূরে মায়ানমার উপকূলে। তবে গঙ্গা-বিমুখ ইলিশের ঝাঁকে খুলনা, পটুয়াখালি বা মায়ানমারের সিতুয়ে এখন ‘জাল মারলেই ইলিশ’।

এর ফলেই নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বাজারে ইলিশ এখন বাড়ন্ত। এ দিকে, মায়ানমার থেকে আসা ইলিশের চাহিদা তৈরি করতে বহু জায়গায় তাকে ‘পদ্মার ইলিশ’ বলে চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। দিঘা ফিসারম্যান অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস জানান, গত বছর এই সময়ে প্রায় একশো টন ইলিশ পাওয়া গেলেও এই মরসুমে মাত্র ২০ টন ইলিশ মিলেছে।

ইলিশ গবেষক তথা কান্দির জেমো এন এন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সূর্যেন্দু দে ইলিশের আকাল প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরের মোহনায় যেখান দিয়ে ইলিশ পদ্মায় প্রবেশ করে সেখানে জাহাজের ভিড় বেড়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক দূষণ ও অপরিণত ইলিশ ধরার কারণেই এমন অবস্থা।’’

রোদহীন মেঘলা আকাশ। ঠান্ডা পুবালি বাতাসের সঙ্গে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে কাঁপুনি ধরে। এমন দিনে পদ্মার বুক চিরে ভেসে বেড়ায় কুবেরের হাঁক—‘যদু হে এ এ, মাছ কিবা?’

দূরের নৌকা থেকে জবাব আসত— ‘জবর।’ প্রশ্নটা আজও পাক খায়। উত্তর মেলে না।

সহ প্রতিবেদন: শুভাশিস সৈয়দ ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন