চিকিৎসকের ভূমিকায় মোদাসশের হোসেন। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
হাসপাতালে দু’বছর কোনও চিকিৎসক নেই। তাতে অবশ্য রোগীর কমতি চোখে পড়ে না। উল্টে উত্তরোত্তর তাঁদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কিন্তু চিকিৎসা করছেন কে?
কেন, ফার্মাসিস্ট! সরকারি ভাবে যাঁর কাজ চিকিৎসকের লিখে দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখে রোগীদের ওষুধ দেওয়া এবং কী ভাবে খেতে হবে তা বুঝিয়ে দেওয়া। ইসলামপুরের হেড়ামপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক না-থাকায় তিনিই এখন ডাক্তার। স্বাস্থ্য দফতর তা জানেও। কিন্তু ডাক্তারের জোগান দিতে তারা ব্যর্থ তাই তারাও চুপ করে রয়েছে।
কিন্তু রোগীরা কেন ফার্মাসিস্টকে দেখাতে ভিড় করছেন?
এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আশপাশের ২৩টি গ্রামের মানুষকে সরকারি হাসপাতালে যেতে গেলে বহু পথ পার হতে হবে। সেটা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। তুলনায় ডাক্তার না-থাকলেও ফার্মাসিস্ট অভিজ্ঞ, হাসপাতালে ওষুধের জোগানও ভাল। ফলে, নিখরচায় প্রয়োজনীয় ওষুধ মেলে। গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার থেকে প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্টই ভাল। কোনও বিকল্পও তো নেই। আগের থেকে রোগীও তাই বেড়েছে। দিন কয়েক আগে হাসপাতালে এক জন নার্সও দেওয়া হয়েছে। তেজসিংহপুরের পূর্ণিমা খাতুনের কথায়, ‘‘ইসলামপুরে লাইন দিয়ে ডাক্তার দেখাতে দিন কাবার হয়ে যায়। তার থেকে এই ভাল।’’
বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী আসেন। দায়িত্বে থাকা নার্স ও ফার্মাসিস্টের দাবি, তাঁরা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে এবং এলাকার মানুষের দাবি মেনেই কাজ করছেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওখানে এক জন চিকিৎসক ছিলেন। বিভাগীয় কিছু জটিলতার কারণে তিনি বর্তমানে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বসে আছেন। অন্য কোনও চিকিৎসক এখনই পাওয়া যাচ্ছে না।’’
ফার্মাসিস্ট মোদাসশের হোসেন বলছেন, ‘‘আমি কাজে যোগ দেওয়ার আগে হাসপাতাল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। এখন হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহও বেড়েছে। সাধারণ মানুষ এসে এখন ওষুধ পাচ্ছেন। ফলে ভিড়ও বাড়ছে। মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ার থেকে তবু কিছু ওষুধ দিতে পারছি।’’
কেবল হেড়ামপুর নয়, জেলার একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে এ ভাবেই। কোথাও আবার নার্স বা ফামার্সিস্টেরও দেখা নেই। সেগুলি বন্ধ। বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ঢেকে গিয়েছে জঙ্গলে। সাপ আর মশার ভয়ে ওই চত্বরে পা রাখেন না অনেকেই। সেখানে অবশ্য হেড়ামপুর ‘কানার মধ্যে ঝাপসা’।