উজ্জ্বলের খোঁজ নেই, গ্রেফতার তিন গ্রামবাসী

জেলা পুলিশের এক কর্তাও কবুল করছেন, ‘‘মাঝে মাঝে অবাকই লাগছে, ছেলেটা হাওয়া হয়ে গেল কী করে!’’ খুন করে কোথাও পুঁতে দিলেও তার একটা চিহ্ন থেকে যাওয়ার কথা বলেই মনে করছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

উজ্জ্বল ঘোষ

উজ্জ্বল-অঙ্ক মিলছে না।

Advertisement

রানাঘাটের আইশতলার বছর ছাব্বিশের উজ্জ্বল মণ্ডল নিখোঁজের পরে ঘুরে গিয়েছে প্রায় আস্ত একটা সপ্তাহ। না পুলিশ, না স্থানীয় মানুষজন— দল বেঁধে ঝোপ ঝাড় নালা-খাল-বিল ঢুঁরেও খুঁজে পাননি তাঁকে। আশা হারিয়ে তাঁর পরিবারের মনেও এখন কু ডাকছে যেন।

সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এলাকার বাসিন্দারে ক্ষোভ। একটা জলজ্যান্ত ছেলে উবে গেল?

Advertisement

জেলা পুলিশের এক কর্তাও কবুল করছেন, ‘‘মাঝে মাঝে অবাকই লাগছে, ছেলেটা হাওয়া হয়ে গেল কী করে!’’ খুন করে কোথাও পুঁতে দিলেও তার একটা চিহ্ন থেকে যাওয়ার কথা বলেই মনে করছে পুলিশ। তা হলে কি নিজেই কোথাও গা ঢাকা দিয়েছে ছাঁট কাপড়ের ব্যবসায়ী ওই যুবক? পুলিশের এক কর্তা জানান, সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে, তাঁকে মারধরের ঘটনায়, রবিবার রাতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের এক জন কার্তিক চৌধুরী মিস্টির দোকানের মালিক। বাকি দু’জন, অক্ষয় ঘোষ এবং উজ্জ্বল ঘোষ। অক্ষয় স্থানীয় ফেরিঘাটের ইজারাদার, উজ্জ্বল এলাকার খুচরো ব্যবসায়ী। সোমবার, পুলিশ তাদের হেফাজতে নেওয়ার প্রার্থনা জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেছে। ধৃতদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

আইশতলা রামনগরের উজ্জ্বল তাঁর জামাইবাবু এবং জনা চারেক বন্ধুকে নিয়ে জামাইষষ্ঠীর দুপুরে বেরিয়েছিল গঙ্গা-স্নানে। বাড়ি থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সাহেবডাঙায় ভাগীরথী নদীতে স্নান সেরে ফেরার সময়ে উজ্জ্বলের বন্ধুরা এগিয়ে গিয়েছিল। জামাইবাবুকে নিয়ে সে একটি মিষ্টির দোকানে ঢোকে। সেই দোকানে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে বচসার জেরে শুরু হয় হাতাহাতি। তার পর থেকেই নিখোঁজ ওই যুবক।

তবে উজ্জ্বলের বন্ধুরা কবুল করেছেন, স্নানের আগে, তারা দীর্ঘক্ষণ মদ্যপান করে। তার পরে নদীতে স্নান সেরে রওনা হয়।

সাহেবডাহার ওই মিস্টির দোকানে তাদের যখন পেটানো হচ্ছে তখন উজ্জ্বলের জামাইবাবু রণজিৎ স্থানীয় বাসিন্দদের অনুরোধ করেন, তাঁর শ্যালককে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়, তাঁর হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। ছেড়েও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তার পর থেকেই সে নিখোঁজ।

এখন প্রশ্ন, উজ্জ্বল গেলেন কোথায়? এলাকার বাসিন্দারা মনে করেন, ছাড়া পাওয়ার পরে উজ্জ্বল প্রথমেই বাড়িতে বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তা না করার অর্থ, তাঁকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।

পুলিশ মনে করছে, উজ্জ্বলের আত্মগোপন করার কোনও কারণ নেই। যদি তিনি সুস্থ থাকেন, তা হলে তিনি বাড়িতে যোগাযোগ করতেনই। যদি তিনি অসুস্থ হয়ে থাকেন, তা হলেও কোনও না কোনও ভাবে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ হতই। উজ্জ্বল ছুটে পালানোর পরেও তাঁকে কয়েকজন তাড়া করেছিল বলেও জানা গিয়েছে। যারা তাড়া করেছিল, নিখোঁজ রহস্যে আলোকপাত তারাই করতে পারবে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশের কাজ হল তাদেরই চিহ্নিত করে জেরা করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন