পড়শি জেলা

চুরি ঠেকাতে সক্রিয় হোক পুলিশ, দাবি নবদ্বীপের

বছর তিনেক আগের কথা। নবদ্বীপের রাধারমণবাগ সমাজবাড়ি থেকে চুরি হয় বিগ্রহ, রুপোর সিংহাসন এবং মূল্যবান স্মারক। মন্দিরের আশ্রমিকদের ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে ওই চুরির ঘটনায় শহরে হইচই পড়ে গিয়েছিল। ২০১৩ সালের জানুয়ারির শেষে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর তিনটি মন্দিরে চুরি হওয়ায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৩:১৫
Share:

বছর তিনেক আগের কথা। নবদ্বীপের রাধারমণবাগ সমাজবাড়ি থেকে চুরি হয় বিগ্রহ, রুপোর সিংহাসন এবং মূল্যবান স্মারক। মন্দিরের আশ্রমিকদের ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে ওই চুরির ঘটনায় শহরে হইচই পড়ে গিয়েছিল। ২০১৩ সালের জানুয়ারির শেষে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর তিনটি মন্দিরে চুরি হওয়ায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তদন্তে নেমে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাঝেরপাড়া থেকে পুলিশ অজিৎ হাড়ি ও তার স্ত্রী পুতুলকে ধরে। তাদের জেরা করে হদিশ মেলে আরও তিন কিশোর কিশোরীর। হাড়ি দম্পতি চুরিতে নিজের সন্তানকে কাজে লগিয়েছিল। যা দেখে তাজ্জব বনেছিল পুলিশ।

Advertisement

তারপর আর মন্দিরে চুরির ঘটনা বড় একটা ঘটেনি। তবে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুরে নবদ্বীপের শতাব্দী প্রাচীন শ্যামসুন্দর জিউর আখড়া থেকে চুরি যায় কৃষ্ণ বিগ্রহ। ‘শ্যামসুন্দর জিউ’ নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত ওই বিগ্রহ আড়াইশো বছরেরও বেশি প্রাচীন। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই আখড়ার সেবাইত মুকুন্দ দাস-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বিগ্রহ উদ্ধার হয়নি। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে তিনটি মন্দিরে চুরির ঘটনা পুরনো স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে।

নবদ্বীপে অন্তত ছোটবড় দেড়শো মঠমন্দির রয়েছে। সব মঠমন্দিরেই রয়েছে প্রাচীন বিগ্রহ, পুঁথি, গ্রন্থ বা বহুমূল্য দ্রব্য। সেই সবের লোভে চোরেরা বারবার হানা দিয়েছে মঠমন্দিরগুলিতে। তাই চুরি হয়নি এমন মন্দির নবদ্বীপে খুঁজে পাওয়া ভার। দুষ্প্রাপ্য মূর্তি চুরির পাশাপাশি অসংখ্য ছোট-বড় চুরির ঘটনাও ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ সব চুরির কিনারা হয় না। তাই কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবার চুরির ঘটনা ঘটতেই নড়েচড়ে বসেছেন মঠমন্দিরের প্রধানেরা।

Advertisement

উদ্বিগ্ন নবদ্বীপ বৈষ্ণব সমাজের কেউ ভাবছেন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কথা। কেউ মাইনে করা রাত পাহারাদার রাখার খরচ হিসেব করছেন। যাদের সে সামর্থ্য নেই তাঁরা জোর দিচ্ছেন পুলিশি টহলদারির পাশাপাশি স্থানীয় নৈশরক্ষী বাহিনী চালু করার দিকে। গঙ্গার তীরবর্তী মঠমন্দির কর্তৃপক্ষ চাইছেন জলপথে টহলদারির ব্যবস্থা করুক পুলিশ প্রশাসন।

গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সহ-সভাপতি তথা বলদেব মন্দিরের কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, “কয়েক দিন আগেও গানতলার মোড়ে সারারাত সিভিক ভলান্টিয়ার থাকত। বলদেব মন্দির, মদনমোহন মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, একলা নিতাই, বড় আখড়া, গোরাচাঁদের আখড়ার মতো একঝাঁক মঠ-মন্দির তাদের নজরে থাকত। ইদানীং সেই তাদের দেখছি না। প্রাচীন বিগ্রহ খোয়া গেলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তাই পুলিশের দ্বারস্থ হব ভাবছি।”

নবদ্বীপ রাধারমণবাগ সমাজবাড়ির জনক দাস বলেন “সমাজবাড়ির সামনে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকত। ফলে এখানে গৌরাঙ্গ মন্দির, শ্রীবাসঅঙ্গন, সমাজবাড়ি-সহ একাধিক মন্দির নিরাপদে রাত কাটাত। অচিরেই মন্দিরে সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।”

নবদ্বীপের সনাতন সন্ত সমাজের সভাপতি অদ্বৈত দাস বলেন, “গঙ্গার তীরবর্তী মন্দিরের কর্তাদের ভয় বেশি। নবদ্বীপের উত্তর এবং পূর্বদিক বরাবর গঙ্গা রয়েছে। নৌকা করে এসে কাজ সেরে তারা সহজেই অন্যত্র পালিয়ে যেতে পারে।’’ তাঁর যুক্তি, চুরির পিছনে জুয়া-সাট্টার ভূমিকা রয়েছে। সাট্টা-জুয়ার সঙ্গে জড়িতেরা জানে চুরির জন্য মঠমন্দিরে হানা দেওয়া সব থেকে সহজ। কোন একটা মন্দিরে হানা দিলে কম করে দশবিশ হাজার টাকা মিলবে। তাই নবদ্বীপের চোরেদের সহজ নিশানা।

নবদ্বীপের প্রাচীন হরিসভা মন্দিরের প্রধান বিবেকবন্ধু ব্রহ্মচারী বলেন, “রাতে কার্যত ফাঁকা থাকে মন্দির। আগের মত নৈশরক্ষী বাহিনী চালু করা গেলে ভাল হয়। রাতে একবার বা দু’বার পুলিশের গাড়ি টহলদারি করে মাত্র।’’ মহাপ্রভু মন্দিরের নিত্যসেবা পরিচালনা করে বিষ্ণুপ্রিয়া সমিতি। তাঁর সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “রাতে মাইনে করা পাহারাদার রেখেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মন্দিরেরই সেই ক্ষমতা নেই। সেক্ষেত্রে পুলিশকে দায়িত্ব নিতে হবে। আরও সক্রিয় হতে হবে।’’

নবদ্বীপের আইসি তাপসকুমার পাল অবশ্য জানান, চুরির বিষয়টি পুলিশ দেখছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন