ভাল বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু অতিবৃষ্টি হয়নি। বানে ডোবেনি নদিয়ার ফুলের চাষ। ফলন হয়েছে ঢালাও। তবুও কমার বদলে পুজোয় চড়েই গেল ফুলের দাম।
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ— এই দুই জেলার মধ্যে নদিয়াতেই মূলত ফুলের চাষ হয়। প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে এ বার ফুলের চাষ হয়েছে। তবু যেখানে ফুলের দাম কমেনি, মুর্শিদাবাদে যে তা আরও চড়া হবে, বলা বাহুল্য। বহরমপুরের দোকানিরা বিশেষ করে রানাঘাট, বেথুয়াডহরি ও হাওড়ার বাজার থেকে ফুল নিয়ে এসে বিক্রি করেন। দাম না চড়ালে তাঁদের পোষাবে কেন?
পঞ্চমীতেও খোদ কৃষ্ণনগর শহরে রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে তিনশো টাকা কেজিতে, গত বারের চেয়ে প্রায় ৫০ টাকা বেশি দরে। কুড়িটি গাঁদার চেন দু’শো টাকা, গত বারের তুলনায় ৩০-৪০ টাকা বেশি। বহরমপুরে সেখানে রজনীগন্ধার চেন ৬ টাকা, দু’দিন আগেও ২ টাকা দরে বিকিয়েছে। ফুল ব্যবসায়ী টোটন পাল জানান, এখনই রজনীগন্ধার সাধারণ মালার দাম পড়ছে ৩৫-১৫০ টাকা। কিন্তু সপ্তমী-অষ্টমীতে প্রতিমায় পরানোর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি মালার দাম পড়বে এক-একটা ৭০০-১০০০ টাকা। গাঁদার এক-একটা চেনের দাম পড়ছে ১৫-২০ টাকা করে।
কেন এমন আকাশছোঁয়া দর?
ব্যবসায়ীরা বলছেন, একে তো বন্যার কারণে উত্তরবঙ্গে ফুলের চাষ ডুবে গিয়েছে। হাওড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়াতেও জমা জলে চাষ নষ্ট হয়েছে। নদিয়া জেলার উদ্যানপালন আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঘোরাই বলেন, “যে সব এলাকায় ফুলের চাষ করা যায়নি, সেখানে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে নদিয়ার মতো জেলাগুলিকে। ফলে দাম কিছুটা হলেও বাড়বে।” দুর্গাপুজোয় পদ্ম লাগেই। চ়ড়েছে তার দামও। বহরমপুরের ব্যবসায়ী চিকু কর্মকার বলেন, ‘‘পদ্ম এখন বাজারে সহজলভ্য। কিন্তু ষষ্ঠী থেকেই পদ্মের দাম বাড়বে। এখন দু’ধরনের পদ্ম বিক্রি হচ্ছে। গুদামে থাকা পদ্মের দর প্রতিটি ৫-৬ টাকা এবং টাটকা পদ্মের দর ১০-১২ টাকা করে।’’
কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “ব্যবসায়ীরা যেখানে দাম বেশি পাবেন, সেখানেই যাবেন। সেই কারণে নদিয়ার ফুল চলে যাচ্ছে হাওড়ার মল্লিকবাজারে। সেখান থেকে অন্যত্র।” কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়ের ফুল ব্যবসায়ী নেপাল ভৌমিক বলেন, “আমাদের জেলার ফুল আমাদেরই কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। শুধু উত্তরবঙ্গ তো নয়, হাওড়ার বাজার হয়ে ফুল চলে যাচ্ছে দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো বড় বড় শহরে। দিওয়ালির জন্য ওরা এখন থেকে ফুল রেখে দিচ্ছে কোল্ড স্টোরেজে।”
ফুলের চাপে হেলে পড়ছে পুজোর বাজেটও। হিমশিম খেতে হচ্ছে পুজো উদ্যোক্তাদের। নদিয়ার অন্যতম নামী পুজো ধর্মদা যুব সঙ্ঘের কর্মকর্তা শ্রীবাস দাস বলেন, “ফুলের দাম যদি এ ভাবে বেড়ে যায়, আমরা কোথায় যাই? চেষ্টা করব, ফুলের ব্যবহার যতটা কমানো যায়।”