আনাজ ছুঁলেই ফোস্কা

সত্যিই এমনটা ঘটেছিল কি না তা নিয়ে সংশয় থাকলেও ক্রমশ চড়তে থাকা আনাজ বাজারের ছবিটা কিন্তু এখন এমনই। বৃষ্টি কমতেই বাজারে যেন আগুন লেগেছে। দাম প্রতিদিন যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে আমজনতার হাসফাঁস অবস্থা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০২:২২
Share:

দাম চড়েছে, কমেছে ক্রেতা। মঙ্গলবার করিমপুরে। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক

ভিড় বাজারে থলে হাতে অনেকক্ষণ ধরে পাক খাচ্ছেন মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক। একের পর এক আনাজের ঝাঁকার সামনে গিয়ে পটল, কুমড়ো, বেগুন, লাউ নাড়াচাড়া করছেন। কিন্তু দরদাম করার পরেই বাজারের কোনের নলকূপে ভাল করে হাত ধুয়ে নিচ্ছেন। বেশ কিছুক্ষণ এটা দেখার পরে এক ব্যবসায়ী প্রশ্নটা করেই ফেললেন, ‘‘মশাই ব্যাপারটা কী বলুন তো? আনাজ নাড়াচাড়া করার পরেই জল দিয়ে হাত ধুচ্ছেন কেন?” প্রশ্নকর্তাকে আনাজ পরখ করার মতোই আপাদমস্তক মেপে ওই ব্যক্তি বেশ উত্তেজিত হয়ে জবাব দিয়েছিলেন, “তো কী করুম? আনাজপত্রের যা দাম হাত দিলেই ছ্যাঁকা লাগতাসে যে। ঠান্ডা করনের লাইগ্যা জল দিতাছি।”

Advertisement

বছর কয়েক আগে কোজাগরী লক্ষীপুজোর আগের দিন বাজারদর নিয়ে কথা প্রসঙ্গে মজাদার ভঙ্গিতে এই গল্পটা বলেছিলেন এক রসিক ব্যবসায়ী। সত্যিই এমনটা ঘটেছিল কি না তা নিয়ে সংশয় থাকলেও ক্রমশ চড়তে থাকা আনাজ বাজারের ছবিটা কিন্তু এখন এমনই। বৃষ্টি কমতেই বাজারে যেন আগুন লেগেছে। দাম প্রতিদিন যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে আমজনতার হাসফাঁস অবস্থা। মাথায় হাত বিক্রেতাদেরও। চড়া দামের কারণে কমছে কেনাবেচা। পটল কিংবা লঙ্কা আড়াই থেকে তিন গুণ দামে বিকোচ্ছে। কুমড়োর দাম আলুর থেকেও চড়া। সবথেকে বড় কথা, বহু জায়গায় টাকা দিয়েও মিলছে না পর্যাপ্ত ও ভাল মানের আনাজ।

বহরমপুরের খুচরো বাজারে দিন দশেক আগে ১২ টাকা কেজি দরের পটল মঙ্গলবার বিকিয়েছে ৩০-৪০ টাকা দরে। ২০ টাকার বেগুন বিকোচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। ১৫-২০ টাকার পেঁপে এখন ৩০-৪০ টাকা। ২৫ টাকার শশা ৪০ টাকার কমে মিলছে না। ২০ টাকার ঝিঙের দাম এখন দ্বিগুণ। একশো গ্রাম কাঁচা লঙ্কা ৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা।

Advertisement

ছবিটা কমবেশি একই রকম করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর কিংবা নবদ্বীপ থেকে নওদাতেও। করিমপুর বাজারে ঢেঁড়স, ওল, বেগুনের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। করিমপুরের বাসিন্দা মিলন বিশ্বাস বলছেন, “আনাজের যা দাম তার থেকে থেকে মুরগির মাংস খাওয়া ঢের ভাল।”

কিন্তু আনাজের বাজারে এ অবস্থা কেন? মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যানপালন বিভাগের সহ-অধিকর্তা শুভদীপ নাথ বলেন, ‘‘নাগাড়ে বেবৃষ্টি হওয়ায় পটল, করলা, শশা, ঝিঙে, লাফা, বেগুন, লাউ ও কুমড়োর মতো ফসলের গাছে দ্রুত পচন ধরছে। উৎপাদনও কমেছে।’’

নদিয়ার উপকৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “বৃষ্টি যথেষ্ট পরিমাণে হয়েছে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এর পাশাপাশি এক শ্রেণির ফড়ে চাষির কাছ থেকে আনাজ কিনে অবস্থার সুযোগও নিচ্ছেন।” মুর্শিদাবাদ জেলা লরি মালিক সমিতির সম্পাদক নবকুমার খাঁ বলেন, “বৃষ্টির পরেই বাইরে থেকে আনাজ আমদানি কমে গিয়েছে।” নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “দুই মেদিনীপুর-সহ নানা জেলা জলভাসি হওয়ার কারণে পেঁয়াজ, আলুর কম আমদানি হচ্ছে। এর ফলে চাহিদা এবং দাম দুই বাড়ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন