যাতায়াতে দ্বিগুণ সময়, খন্দপথে বাড়ছে ক্ষোভ

রাস্তা কতটা খারাপ হলে এমন ছবি উঠে আসে! চিত্র এক: দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ কান্দি মহকুমা হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স চালক তিরিশ কিলোমিটার দূরের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছলেন সন্ধে সাতটায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০৮
Share:

রাস্তা কতটা খারাপ হলে এমন ছবি উঠে আসে! চিত্র এক: দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ কান্দি মহকুমা হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স চালক তিরিশ কিলোমিটার দূরের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছলেন সন্ধে সাতটায়। আড়াই ঘণ্টা সময় চলে গেল যানজটের গেরোয়।

Advertisement

চিত্র দুই: পুজোর আগে ব্যবসার কারণে প্রতিদিন বহরমপুর থেকে কান্দি আসতে হয় হীরেন্দ্রনাথ ত্রিবেদীকে। সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কান্দির দোকানে পৌঁছে যেতেন ন’টার মধ্যে। বিগত মাস আটেক ধরে নির্ধারিত সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েও দোকানে পৌঁছতে তাঁর প্রায় দশটা বেজে যাচ্ছে। কারণ সেই যানজট এবং রাস্তার বেহাল দশা। ব্যবসায়ী জানালেন মাত্র তিরিশ কিলোমিটার রাস্তা আসতে এতকষ্ট হয় যে আর কাজ করার ইচ্ছে থাকে না!

কান্দি-বহরমপুর রাজ্য সড়কের বেহাল দশার কারণে দিনের পর দিন জেরবার হতে হচ্ছে সকলকেই। পুজোর আগে সেই ক্ষোভ কয়েকগুণ বেড়েছে। আগে ক্গে যে তিরিশ কিলোমিটার রাস্তা যেতে পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় লাগত, এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। উপরি পাওনা বলতে বহরমপুরের যানজট। যানজটের কবলে পড়ে দু’কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় লেগে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা। কান্দি-বহরমপুর রুটে সরকারি, বেসরকারি মলিয়ে প্রায় দেড়শোটি বাস নিয়মিত যাতায়ত করে। চলে বহু ছোট ও পণ্যবাহী গাড়ি। এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পিচের চাদর উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে পরিবহণ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বাড়ছে ক্ষোভ।

Advertisement

কান্দি মহকুমা বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিদিনই বাসের কোনও না কোনও যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। বহুবার রাস্তা মেরামতের দাবি জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।” ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কান্দি মহকুমা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালক কাজল শেখ, উসমান শেখরাও।

মুর্শিদাবাদ জেলার কলেশ্বর মোড় থেকে ভায়া কান্দি হয়ে বহরমপুর পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার রাস্তা বেশ কয়েক মাস ধরেই বেহাল। তবে কলেশ্বর মোড় থেকে বীরভূম যাওয়ার রাস্তা কিছুটা ভাল। কিন্তু, কান্দি-বহরমপুর ৫০ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ৪০ কিলোমিটার চলাফেরার অযোগ্য হয়ে উঠেছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। কান্দি মহকুমা নিত্যযাত্রী সংস্থার পক্ষ থেকে বহুবার রাস্তা সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছিল। কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। রাস্তার অবস্থা বরং খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়েছে। সম্প্রতি পূর্ত দফতরের পক্ষ থেকে রাস্তার খানাখন্দ ভরাট করতে ইট ফেলা হয়। সেই ইটও সপ্তাহখানেকের মধ্যে ভেঙে গিয়েছে! কান্দি মহকুমা নিত্যযাত্রী সংস্থার কোষাধ্যক্ষ চন্দন মণ্ডলের ক্ষোভ, কান্দি থেকে বহরমপুর যাতায়াতেই পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। পুজোর মুখে গোদের উপরে বিষফোড়া বহরমপুরের যানজট।

রাস্তার বেহাল দশার কথা মেনেছেন পূর্ত দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। দফতরের বহরমপুর ১ নম্বর ডিভিশনের আধিকারিক হাসানূর জামানের ব্যাখ্যা, অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তার উপর দিয়ে জল বয়ে গিয়েছে। তার ফলেই রাস্তা আরও ভেঙেছে। তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘‘দ্রুত রাস্তা যান চলাচলের মতো করা হবে।” পুরোদস্তুর মেরামত হতে কত দিন সময় লাগবে? পূর্তকর্তার আশ্বাস, ‘‘রাস্তার দরপত্র হয়ে গিয়েছে। পুজোর পরেই ভাল করে রাস্তা সারানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন