নিজস্ব চিত্র
সকালবেলা পড়়তে বসার বদলে বছর বারোর সোহেল মণ্ডল বাজারে ফল বিক্রি করতে বসে। ফল বেচে দিনের শেষে আয় হয় ১০০-১৫০ টাকা মতো। সংসারের চার জনের পেট চলে সেই টাকাতেই। লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন সোহেলের বাবা নদিয়া জেলার পলাশিপাড়া থানার পলশুন্ডার বাসিন্দা মঈনউদ্দিন মন্ডল। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে এখন তাঁর সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া কিশোর ছেলে সোহেল মণ্ডল।
দীর্ঘ লকডাউন যেমন অনেককে কাজহারা করেছে, তেমনই পড়়াছুট হয়েছে অনেক ছাত্রছাত্রী। পড়া বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ, লকডাউনের ফলে অভিভাবকদের কর্মচ্যূতি। পেটের জ্বালা সামলাতে কাজে নামতে হয়েছে কিশোর-কিশোরীদের। সেই দলে নাম জুড়েছে সোহেলেরও। ট্রাক্টর চালাতেন মঈনুদ্দিন। নানা রকম শারীরিক অসুস্থতায় আর স্টিয়ারিং ধরতে পারছিলেন না। অন্য কাজ খুঁজছিলেন। কিন্তু কাজ পাওয়া আর হয়ে ওঠেনি লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায়। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, কিশোর পুত্র আর দশম শ্রেণির পড়ুয়া কিশোরী কন্যা। অবশেষে পেটের তাগিদে রোজগার করতে পথে বেরোতে হয় বারো বছরের সোহেলকে। গত চার মাস ধরে পলশুন্ডা বাজারে দু’বেলা ফল বিক্রি করে সে সংসার চালাচ্ছে। সোহেল পলশুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের স্কুলে অপেক্ষাকৃত নিচু ক্লাসে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে না। কিছু সময় পর পর সিলেবাস এবং নোটস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পড়াশোনার সঙ্গে এখন সম্পর্ক নেই সোহেলের। দু’বেলা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রাতে বাড়ি ফিরে বই খুলে বসলেই দু’চোখের পাতা জুড়ে আসে তার। সোহেল বলে, ‘‘বাবা সুস্থ হয়ে কাজ শুরু না-করা পর্যন্ত আমাকে কাজ করতেই হবে। পড়়াশোনাও চালাবো। কিন্তু এখন করতে পারছি না। খুব ক্লান্ত লাগে।’’ এমন পরিস্থিতিতে মরমে মরে রয়েছেন অসহায় বাবা। বলেন, ‘‘কিচ্ছু করতে পারছি না ওর জন্য। ভবিষ্যতে কপালে কী লেখা আছে জানি না।’’ আর পলশুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত করের কথায়, ‘‘ছেলেটি পরিবারের প্রয়োজনে যে ভাবে ধাঁপিয়েছে তা প্রশংসনীয়। তবে এর সঙ্গে সে যাতে পড়়া চালাতে পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’