সামাল: বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
যাদের পাওয়ার কথা ছিল, তারা এক বছরেরও বেশি ধরে হাপিত্যেশ করে বসে আছে। অথচ তাদের টপকে ছোটরা পেয়ে গিয়েছে ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল।
স্বভাবতই রেগে আগুন বড়রা। প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সোমবার জঙ্গিপুর হাইস্কুলে গিয়ে চড়াও হল রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুলের প্রায় শ’তিনেক ছাত্রী। গত বছরই তারা মাধ্যমিক পাশ করে গিয়েছে। এখন সকলেই রঘুনাথগঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু যা সময়ে পেয়ে গেলে তাদের স্কুল যাতায়াতের সুবিধা হয়, সেই সাইকেল আজও জোটেনি।
এই বিক্ষোভের জেরে এ দিন শুরুতেই বন্ধ হয়ে যায় সাইকেল বণ্টন। উপস্থিত সরকারি অফিসারদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায় ছাত্রীদের। বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ ডাকা হয়। পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে পুলিশের পাহারাতেই সাইকেল বিলির কাজ চলে।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের এক জন মৌমিতা পণ্ডিতের কথায়, “আমরা ৩২১ জন ছাত্রী ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শেষে মাধ্যমিক পাশ করে স্কুল ছেড়েছি। কিন্তু বারবার দরবার করেও সাইকেল পাইনি। আমাদের আগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীরাও সাইকেল পায়নি। অথচ জঙ্গিপুর হাইস্কুল থেকে ২০১৭ সালের মাধ্যমিক পাশদের সাইকেল দেওয়া হচ্ছে।”
আর এক ছাত্রী সুচেতা দাস বলে, “আমরা জঙ্গিপুর হাইস্কুলে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা শোনা হয়নি। বরং সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছি বলে দাবি করে জেলে পোরার হুমকি দিয়েছেন এক অফিসার। আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই, এই বৈষম্য কেন?”
রঘুনাথগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা চন্দ্রাণী চক্রবর্তী জানান, আগের বছরের ছাত্রীরা যে সাইকেল পায়নি, তা স্কুলের তরফে মহকুমাশাসকের দফতরে বারবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও পুরনোদের বাদ দিয়ে কেন নতুন ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হল, তা আমাদের জানা নেই। পুরনো ছাত্রীদের ক্ষোভ সেই কারণেই।”
মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পুরবী দে বিশ্বাস বলেন, “নবম শ্রেণিতেই প্রতিটি স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকা প্রশাসনিক দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন যারা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে, এত দিন তারা কেন সাইকেল পায়নি, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের কর্তারা বলতে পারবেন।”
জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক টি বালসুব্রহ্মণ্যম বলেন, “চাহিদা মতো সাইকেল পেতে মাঝে কিছু সমস্যা হয়েছে। আরও সাইকেল আসছে। কিন্তু যাদের নামে যত সাইকেল বরাদ্দ হয়ে এসেছে তা থেকে আগের বছরের ছাত্রীদের দেওয়া হলে জটিলতা তৈরি হবে। আমরা সেটা করতে চাইছি না।’’ কী কারণে তালিকায় আগে নাম থাকা ছাত্রীদের সাইকেলে এসে পৌঁছয়নি, তার সদুত্তর মেলেনি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা আমার কাছেও এসেছিল। খুব তাড়াতাড়ি সাইকেল পাবে বলে ওদের আশ্বাস দিয়েছি।”