সবে তো স্কুলের গণ্ডি। পড়াশোনা শেষ করে বড় চাকরি করতে চায় সে। কিন্তু তার কথায় মা ভ্রূক্ষেপই করে না। উল্টে বিয়ের ব্যবস্থা করছে।
থানায় দাঁড়িয়ে গড়গড় করে বলেই চলেছিল বছর তেরোর মেয়েটি। বিয়ের কথা চলছে জানতে পেরেই তাই এক পড়শির হাত ধরে সে সটান হাজির নাকাশিপাড়া থানায়।
শুক্রবার নাকাশিপাড়ার বিল্বগ্রাম পূর্বপাড়ার ঘটনা। নাবালিকা মেয়েটি বেথুয়াডহরির কাঁঠালবেড়িয়া হরকুমার হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। নাম শম্পা মণ্ডল। গোটা বিষয়টি জানার পর পুলিশ ওই নাবালিকার মাকে ডেকে পাঠায় থানায়। মুচলেকা দেন তিনি, ১৮ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না। একরোখা মেয়ে তার পরে মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফেরে।
নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তন্ময় সরকার জানান, বাল্যবিবাহ রুখতে সব সময়ই চেষ্টা করছে পুলিশ-প্রশাসন। তবে এ দিনের ঘটনা কুর্ণিশ জানানোর মতো।
শুক্রবার শুধু মেয়েটির মাকেই নয়, পাত্রকেও ডেকে পাঠানো হয় থানায়। নাবালিকা বিয়ের কুফল সম্পর্কে বোঝানো হয় তাঁকেও।
পুলিশ সূত্রে খবর, শম্পার বাবা বছর পাঁচেক ধরে আরবে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তারা দুই বোন ও এক ভাই। সম্প্রতি বেথুয়াডহরির এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন তার মা। কিন্তু মেয়ে জেদ চেপে ছিল, পড়াশুনা সে করবেই। সে এ-ও শুনেছে, এমন অল্প বয়সে বিয়ে করা মোটেই ঠিক নয়। এ দিন সে বলে, ‘‘আমি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু মা আমার বিয়ে দিতে চাইছিল। মা অবশ্য থানায় কথা দিয়েছে, ১৮ বছরের আগে আমার বিয়ে দেবে না।’’
প্রতিবেশী সন্ধ্যা শী বলেন, “আমরা বারবার নিষেধ করেছিলাম। কিছুতেই শোনেনি। যাক, শেষমেশ অন্তত মত বদলেছে।’’
নাবালিকা বিয়ে রুখতে লাগাতার প্রশাসনের তরফে প্রচার করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও নাবালিকার বিয়ে বন্ধ হচ্ছে কই? সরকারি হিসেব বলছে, চলতি বছরে নদিয়া জেলায় অন্তত পক্ষে ৬ হাজার নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। সেখানে মাত্র ৭৮ জনের বিয়ে রুখতে পেরেছে জেলা প্রশাসন। গর্ভবতী মহিলাদের ২৬ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে।
মাস ছয়েক আগেই নাকাশিপাড়া পুরোহিত কল্যাণ সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরা নাবালিকা বিয়ে দেবেন না। তাদের সংগঠনের কোনও সদস্য যদি এ কাজ করে আইনি জটিলতায় পড়েন, তার দায়ও তাঁরা নেবেন না। এ দিনের ঘটনার কথা শুনে নাকাশিপাড়া পুরোহিত কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সদস্যদের জানিয়েছি, কোনও ভাবেই নাবালিকা বিয়ে দেওয়া যাবে না। তা ছাড়াও পাত্রীর বয়সের সার্টিফিকেট দেখার পরই আমরা বিয়ে দিচ্ছি।”
গোটা ঘটনার কথা জানা ছিল না কাঁঠালবেড়িয়া হরকুমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণকমল দে-র। উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘‘দারুণ কাজ করেছে ও। স্কুলের সকলের সামনে অনুপ্রেরণা হয়ে রইল।’’