Beedi Labours

ক্ষমতার বদলে বদলায়নি মহল্লা

বিড়ি মহল্লায় ১৯৫১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বার জিতেছে কংগ্রেস, বামেরা ৬ বার। পরে পরিস্থিতি বদলায়। বিড়ি শিল্পাঞ্চল বলতে বোঝায় সুতি বিধানসভা ক্ষেত্রকে।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২০
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বিড়ি শিল্প শহর অরঙ্গাবাদে দাঁড়িয়ে ২০০৭ সালেই বিড়ি শ্রমিকদের এক প্রকাশ্য সভায় জঙ্গিপুরের তৎকালীন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সতর্কবার্তা শুনিয়েছিলেন, “বিড়ি শিল্পে ঘনিয়ে আসছে অস্তিত্বের সঙ্কট।” তাই সরকার, বিড়ি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলিকে শ্রমিকদের জন্য বিকল্প জীবিকার কথা ভাবতে হবে।

Advertisement

প্রণববাবুর এই সতর্কবার্তার পর অনেকেই আশা করেছিলেন বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হবে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে। রাজ্যের বাম সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ২০১৫ সালে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল জঙ্গিপুরের বিড়ি শিল্পাঞ্চলের কথা চিন্তা করে প্রতি বছর কেন্দ্রীয় বাজেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হোক বিড়ি শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য। তারপরে পেরিয়ে গিয়েছে ১৬টি বছর। সরকার বদলেছে রাজ্যে এবং কেন্দ্রে। কিন্তু বিড়ি শ্রমিকদের ভবিতব্য থমকে রয়েছে সেই সতর্কবার্তা ও প্রস্তাবের মধ্যেই।

কী করেছেন রাজনৈতিক নেতারা?

Advertisement

বিড়ি শ্রমিকদের মধ্যে এক সময় ছিল কংগ্রেসের একচ্ছত্র প্রভাব। বামেরা সেই ভোটে থাবা বসালেও তা কখনওই ধরে রাখতে পারেনি। বিড়ি মহল্লায় ১৯৫১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বার জিতেছে কংগ্রেস, বামেরা ৬ বার। পরে পরিস্থিতি বদলায়। বিড়ি শিল্পাঞ্চল বলতে বোঝায় সুতি বিধানসভা ক্ষেত্রকে। এই মুহূর্তে ওই কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা কম বেশি প্রায় ২.৭০ লক্ষ। যার ৮৫ শতাংশই বিড়ি শ্রমিক, যার সংখ্যাগরিষ্ঠই মহিলা। লক্ষ্মীর ভান্ডার তাদের উপরি পাওনা।

২০০১ সালের নির্বাচনে ৩৮ শতাংশ ভোট পায় বামেরা, কংগ্রেসের ভোট কমে হয় ৩৪ শতাংশ।২০০৬ সালেও শ্রমিক মহল্লায় প্রভাব ধরে রাখে বামেরা। ২০১১ সালে কংগ্রেসের ভোট এক লাফে বেড়ে ৪৮.৮৭ শতাংশে দাঁড়ায়। বাম ভোট নেমে আসে ১১ শতাংশ। জয়ী হয় কংগ্রেস। এর বড় কারণ মনে করা হয় বিড়ির মজুরি বৃদ্ধি। ২০১০ সালে ২০ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি ঘটে।

২০১১ সালে বিড়ির মজুরি বাড়ে ৩৬ শতাংশ। কংগ্রেস তাদের ৪৪.৬৪ শতাংশ শ্রমিক ভোট ধরে রাখতে সক্ষম হলেও বাম ভোটের পুরোটাই ঢলে পড়ে তৃণমূলে।

বামেদের সমর্থন নেমে আসে ৩৭ থেকে ২ শতাংশে। ২০২১ সালে তৃণমূল শ্রমিক মহল্লার ভোট কার্যত দখল করে নেয়। ৫৮.৮৭ শতাংশ ভোট পায় তৃণমূল। কংগ্রেস নেমে যায় ৮.৬ শতাংশে। শ্রমিকদের মধ্যেও বড় হয়ে ওঠে ধর্মীয় মেরুকরণ। ২৬.১৯ শতাংশ শ্রমিক ভোটের দখল নেয় বিজেপি।

২০০৯ এবং ২০১২’র লোকসভা উপনির্বাচনেও এই বিড়ি শ্রমিক মহল্লাগুলি ছিল ভোট নিয়ে রীতিমতো সরগরম।

কিন্তু এখন রাজনীতি ও ভোট নিয়ে পুরোপুরি উদাসীন শ্রমিক মহল্লা। ভোট দিতে হয় দেন, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামান না শ্রমিকেরা।

৭২ সালে যেখানে ৬৫ শতাংশ শ্রমিক ভোটকেন্দ্রে গেছেন, সেখানে ২০০৯ সালের পর থেকে ভোট দানের হার বেড়ে হয়েছে ৮৬ থেকে ৮৮ শতাংশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি তাদের আজও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন