West Bengal Panchayat Election 2023

অভিষেকের বার্তার পর হুঙ্কার থামল হুমায়ুন-সহ তিন বিধায়কের, বিধায়ক গেলেন ডোমকলের সভাতেও

মনোনয়ন নিয়ে প্রথমে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি এবং মুর্শিদাবাদের চার বিধায়কের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। বিধায়ক অনুগামীদের ভোটের টিকিট থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তোলেন হুমায়ুন কবীররা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ১৭:৫৩
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। হুমায়ুন কবীর (ডানদিকে)।

প্রস্তুতি চূড়ান্তই ছিল। মঙ্গলবার বেলা ১টা থেকে বহরমপুর টেক্সটাইল মোড়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি এবং চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের চার ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার দিন জেলার দলীয় বিধায়কদের এমন ‘কর্মসূচি’তে অস্বস্তি বাড়ছিল শাসকশিবিরে। তবে অভিষেকের বার্তার পেয়ে রণে ভঙ্গ দিলেন হুমায়ুন-সহ চার বিধায়ক। তৃণমূল জেলা সভাপতির অপসারণ চেয়ে ডাকা মিছিলের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠলেন তাঁরা। অভিষেকের ডোমকলের সভায় ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন এবং হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের আমন্ত্রণ ছিল না। যদিও বুধবার দুপুরে ডোমকলে অভিষেক পৌঁছনোর পর তাঁর সঙ্গে ছিলেন হুমায়ুন। ছিলেন ডোমকলের সভাতেও। নিয়ামতও ছিলেন অভিষেকের সভায়। যা দেখে বিজেপির খোঁচা, ‘‘তৃণমূল বিরোধী ভোটব্যাঙ্কে ধরে রাখতে নতুন চিত্রনাট্য তৈরি করছেন হুমায়ুন।’’

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে প্রথমে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি এবং মুর্শিদাবাদের চার বিধায়কের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। দলের ব্লক সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে বিধায়ক অনুগামীদের ভোটের টিকিট থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তোলা হয় তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় এবং চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকারের বিরুদ্ধে। দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে একের পর এক হুঁশিয়ারি দেন ভরতপুরের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন। সেই পথ ধরেন হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত, জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক এবং নওদার বিধায়ক শাহিনা মমতাজও। দলের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে হুমায়ুনের ছেলে এবং শাহিনার মেয়েকে। তার পরও সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভানেত্রীর অপসারণ চেয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দরবার করেন চার জন। ভোটের আগে ‘বিদ্রোহী’ বিধায়কদের সামাল দিতে মাঠে নামানো হয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং মলয় ঘটককে। মলয়ের মধ্যস্থতায় জট কেটে গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার বিদ্রোহের সুর শোনা যায় হুমায়ুনের গলায়। এর পর অভিষেকের সভার দিনই বহরমপুর টেক্সটাইল মোড়ে জেলা সভানেত্রীর অপসারণ যে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন হুমায়ুন-সহ চার বিধায়ক। ঘটনাক্রমে ডোমকলের সভায় আমন্ত্রণ পাননি হুমায়ুন এবং নিয়ামত। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রে বলছে, সোমবার সন্ধ্যাতেই চার বিধায়ককে ফোন করেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর অভিষেকের অফিস থেকেও নাকি হুমায়ুন এবং নিয়ামতের কাছে ফোন যায়। সেখানে বলে দেওয়া হয় যে, ডোমকলের সভায় তাঁদের থাকতে হবে না। তবে আমন্ত্রণ পান জলঙ্গীর বিধায়ক এবং নওদার বিধায়ক শাহিনা। এ নিয়ে জেলা তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয় চাপান-উতোর। শেষ পর্যন্ত সুর নরম করলেন হুমায়ুন। জানালেন, শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ পালন করছেন তিনি। একই সঙ্গে জানালেন, দলের মধ্যে কোনও ‘অনিয়ম’ দেখলে প্রতিবাদ তিনি করবেনই। তাঁর ‘অনুগামীদের’ উদ্দেশে হুমায়ুন জানান, তাঁরা যেন এমনটা না মনে করেন যে, তিনি পিছিয়ে গেলেন। বিধায়ক হিসেবে তিনি দলের অনুশাসন মেনেছেন।

হুমায়ুন-সহ তিন তৃণমূল বিধায়কই অভিষেকের সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে শাহিনা অভিষেকের সভায় উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, আপাতত হুমায়ুনের বিদ্রোহ-পর্ব শেষ হল। তবে বিজেপির দাবি, ভোটের আগে বিদ্রোহের এই ‘চিত্রনাট্য’ তৈরি করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মুর্শিদাবাদের বিজেপির জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘তৃণমূল বিরোধী ভোট বিদ্রোহীদের মাধ্যমে ধরে রাখতে নতুন রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে তৃণমূল।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন