লড়াই দখল নিয়ে, বোমা ফেটে জখম

শুক্রবার কল্যাণী মহাবিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছিল। দুই সংগঠনই চাইছিল, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের শুরুতেই নিজেদের দিকে টানতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০৫:৫১
Share:

হাসপাতালে জখম এবিভিপি সদস্য। নিজস্ব চিত্র

গত কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা দানা বাঁধছিল। শুক্রবার কল্যাণীতে কলেজ দখলের লড়াইয়ে ফাটল বোমা। জখম হলেন এবিভিপি সমর্থক দুই ছাত্র। তাঁরা কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি। এবিভিপি-র অভিযোগ, টিএমসিপি-র দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় তাঁরা জখম হয়েছেন। যদিও নিজেদের সঙ্গে আনা বোমা ফেটেও এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান। রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ কাউকে ধরেওনি।

Advertisement

শুক্রবার কল্যাণী মহাবিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছিল। দুই সংগঠনই চাইছিল, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের শুরুতেই নিজেদের দিকে টানতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল থেকে কলেজের সামনে এবং আশপাশে দু’পক্ষে ছোটখাটো ঝামেলা বাধছিল। টিএমসিপি কর্মী-সমর্থকেরা প্রথমেই ঢুকে পড়েছিল মহাবিদ্যালয়ে। বেলা ১১টা নাগাদ এবিভিপি-র সমর্থকেরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে বাধা পায় বলে অভিযোগ। সঙ্গে-সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরাও কলেজের সামনে চলে আসে।

ইতিমধ্যে বেশ কিছু এবিভিপি সমর্থক শিল্পাঞ্চল স্টেশনের কাছে রেললাইনের ধারে জড়ো হয়েছিল। পুলিশ এলে তাঁদের একটা অংশ ক্যাম্পাসে ঢোকে। তার পর থেকেই ক্যাম্পাসের ভিতরে-বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এবিভিপি অভিযোগ করে, ভিতরে টিএমসিপি-র ছেলেরা তাদের সমর্থকদের মারধর করছে। তারই মধ্যে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগতেরা জমা হতে শুরু করে।

Advertisement

কল্যাণী থানার সামনে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র

দুপুর আড়াইটে নাগাদ আইটিআই মোড়ে টিএমসিপি কার্যালয়ের সামনে প্রচুর মোটরবাইক জড়ো হতে দেখা যায়। কলেজ গেটে টিএমসিপি-র পোস্টার লাগাতে-লাগাতে এক জনকে পুলিশের সামনেই ফোনে বলতে শোনা যায়, ‘‘ভিতরের দখল আমরা নিয়ে নিয়েছি। তোরা বাইরে পাহারা দে। আর পারলে গেটের সামনে কয়েক জনকে পাঠিয়ে দে।’’

পরিস্থিতি আচমকা বেগতিক হয়ে ওঠে দুপুর ৩টে নাগাদ। কলেজের ভিতরে দুই সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল ঝামেলা বেধে যায়। এ দিকে অন্তত পঞ্চাশটা মোটরবাইকে কলেজের চলে আসে শতাধিক দুষ্কৃতী। তারা হাউজিং রেল গেট পেরিয়ে চলে যায় রামস্বরূপ কারখানার দিকে।

এবিভিপি-র অভিযোগ, গয়েশপুর আর কাঁচরাপাড়া থেকে দুষ্কৃতীদের এনে হামলা করিয়েছে টিএমসিপি। তাদের সঙ্গে ছিল মাঝেরচরের দুষ্কৃতী বাচ্চু দাসের শাগরেদরা। টিএমসিপি-র নদিয়া জেলা সভাপতি সৌরিক মুখোপাধ্যায়ের কার্যালয়ে দুষ্কৃতীরা অপেক্ষা করছিল। বেলা ৩টে নাগাদ তারাই কলেজের পাশে ওই কারখানার সামনে চলে আসে। সকলকে পথ দেখিয়ে হলুদ মোটরবাইকে এসেছিল ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক যুবক। তার বাবা এক সময়ে পুলিশে কাজ করতেন। তার নেতৃত্বেই রামস্বরূপ কারখানার সামনে অন্তত পাঁচটি বোমা মারা হয়।

এবিভিপি-র দাবি, ওই বোমার ঘায়েই পিছনে কোমরের নীচে ও পায়ে চোট পান রাহুল মণ্ডল ও তারক হাওলাদার নামে দুই ছাত্র। কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল কলেজ ও হাসপাতালের শল্য বিভাগে শুয়ে রাহুল জানান, তাঁর বাড়ি চাঁদামারিতে। তিনি ও তারক কলেজে ভর্তি হতে এসেছিলেন। ফেরার পথে বোমাবাজির মধ্যে পড়েন। তারকের পিছনে গুরুতর চোট লেগেছে, তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ঘটনার পরে হাসপাতালে পুলিশ গেলে শতাধিক বিজেপি কর্মী তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। সন্ধ্যাতেও শ’তিনেক বিজেপি কর্মী-সমর্থক কল্যাণী থানায় বিক্ষোভ দেখায়।

বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মানবেন্দ্র রায় অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূলের ছোড়া বোমায় দুই ছাত্র জখম হয়েছে। কলেজ রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যে ভাবে বোমা পড়ল, ভাবাই যায় না!’’

তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি: হাসপাতাল সূত্রে যা জানা গিয়েছে, তাতে বোমা ফেটেছে গায়ের কাছেই। উল্টো দিরক থেকে বোমা ছোড়া হয়ে থাকলে সেই সম্ভাবনা কম। বরং নিজেদের সঙ্গে থাকা বোমা ফাটলেই এই ভাবে চোট লেগে থাকতে পারে। রাতে সৌরিকও দাবি করেন, ‘‘বোমা এনেছিল বিজেপি আর এবিভিপি-র লোকজনই। এর আগে আসাননগর, বগুলা, রানাঘাটে ওরা যা করেছে, এখানেও সে ভাবে জোর করে কলেজ দখল করার চেষ্টা করেছিল। তা না হলে কেন যারা আদৌ ছাত্র নয়, তারা কলেজের সামনে জড়ো হবে?’’

বহিরাগত দুষ্কৃতী আনার অভিযোগ তো রয়েছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধেও? সৌরিকের দাবি, ‘‘আমরা বহিরাগত কাউকে আনিনি। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ রাতে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, ‘‘কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কল্যাণী শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন